মেহেদী হাসান
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি মনোনয়নের গ্রিন সিগন্যাল বা সবুজ সংকেত নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। গণভবনের চারপাশে ঘোরাঘুরি করে অনেকে এলাকায় গিয়ে বলছেন, মনোনয়ন পেয়েছি। কোনো কোনো আসনে আবার তিনজন করে সবুজ সংকেত পাওয়ার দাবি করছেন। জানা গেছে, ৭০ জনকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। তবে ১৮০ জন প্রার্থী গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলে দাবি করছেন। যেহেতু গোপনে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে, তাই কে পেয়েছেন, আর কে পাননি তা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ জানেন না। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তৃণমূলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন এক শ্রেণির মনোনয়ন প্রত্যাশী।
জানা গেছে, ফেনীর একটি আসনে দুই অভিনেত্রী মনোনয়ন প্রত্যাশী। দুজনই এলাকায় ঘোষণা দিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনার সিগন্যাল পেয়েছি।’ পাবনার এক নেতা সম্প্রতি এলাকায় বলেছেন, ‘তার নমিনেশন কনফার্ম।’ জামালপুরের একটি আসনে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেত্রী এলাকায় ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘নেত্রীর সিগন্যাল পেয়েছি, তাই এসেছি।’ এরকম ঘটনা ঘটেছে ১৮০টি সংসদীয় আসনে। গণভবন সূত্র জানায়, অনেকে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ প্রকাশ করে। সভানেত্রী তাকে বলেন, এলাকায় যাও, কাজ করো। মানে হলো, এলাকার মানুষ তোমাকে কিভাবে গ্রহণ করছে তা পরখ করো। কিন্তু সে এলাকায় গিয়ে বলছে, সে নমিনেশন পেয়ে গেছে।
এসব ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের তিনজন সদস্য ইত্তেফাককে জানান, ‘এখনো প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেনি আওয়ামী লীগ। কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবে, তা দলের সভানেত্রী ছাড়া আপাতত কারোরই জানার কথা নয়। তবে যেটুকু জেনেছি, যাদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে তারাই যে প্রার্থী হবেন সেটা চূড়ান্ত নয়। তাই দল এবং সভানেত্রীর বরাত দিয়ে চূড়ান্ত গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার কথা বলে যারা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন, তারা নিজ থেকে মনগড়া কথা বলছেন। এমন প্রচারণায় বিভ্রান্তি ছড়ালে অথবা নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেললে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তারা আরো বলেন, অনেকেই মনোনয়ন পেতে দলের সভনেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে আসছেন। এ ক্ষেত্রে হয়তো প্রধানমন্ত্রী সবাইকে মাঠে থাকতে বলে আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন। এই আশীর্বাদ যদি কেউ মনে করেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, তাহলে ভুল করবেন।
মনোনয়ন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও ১৮০ আসনের প্রার্থী সিগন্যাল পেয়েছেন বলে মাঠে নেমেছেন। এসব নেতা তাদের কর্মী বা অনুগতদের বুঝিয়ে আসছেন যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আবার অনেকেই বলছেন, দলের পক্ষ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই মাঠে নামা হয়েছে। প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমও সংবাদ প্রকাশ করে আসছে বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে। অভিযোগ রয়েছে নিজেদের প্রচার এবং মাঠ দখলের জন্যই বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন ৩০০ আসনে ৪ হাজার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে।
সম্প্রতি প্রার্থী তালিকা এবং প্রচার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রার্থী চূড়ান্ত করার একক ক্ষমতা সভনেত্রী শেখ হাসিনার। অন্য কারোর তা জানার কথা নয়। এটা ঠিক যে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েক জনকে মনোনয়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে এটা চূড়ান্ত মনোনয়ন নয়। কারো মনোনয়ন একেবারে শিউর এমন আশ্বাস দেওয়া হয়নি।’
আওয়ামী লীগের দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রার্থী যাচাই হচ্ছে। এই যাচাই প্রক্রিয়া চলমান। তা ছাড়া, আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে। জোটের সঙ্গেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা এখনো হয়নি। এমন অবস্থায় কেউ যদি দল এবং সভানেত্রীর নাম নিয়ে বলে যে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, তাহলে এর দায় ওই ব্যক্তির।