এক ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ।
মেহেদি হাসান মিরাজের দুর্দান্ত বোলিং ও নাজমুল হোসেন শান্তর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। প্রথম ম্যাচ ৬ উইকেটে জিতেছিলো টাইগাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দ্বিপাক্ষীক টি-টোয়েন্টি সিরিজেই জয় নিশ্চিত করে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সাকিবের দল।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মিরাজের ঘুর্নিতে খেই হারিয়ে ২০ ওভারে ১১৭ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ১২ রানে ৪ উইকেট নেন মিরাজ। জবাবে শান্তর অনবদ্য ৪৬ রানে ৭ বল বাকী রেখেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ত্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেন স্বাগতিক বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে উইকেট পাইয়ে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। থার্ডম্যানে থাকা হাসান মাহমুদকে ক্যাচ দেন ওপেনার ৫ রান করা ডেভিড মালান।
দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আরেক ওপেনার ফিল সল্ট ও মঈন আলি। পাওয়ার-প্লেতে দলকে ৫০ রান এনে দেন তারা।
সল্ট-মঈনের জুটি ভাঙ্গতে সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই সাফল্যের দেখা পান সাকিব। তৃতীয় ডেলিভারিতে সাকিবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সল্ট। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯ বলে ২৫ রান করেন তিনি।
সল্টের বিদায়ের পর মহাবিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। অষ্টম ওভারে প্রথম বল করতে এসে শেষ ডেলিভারিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জশ বাটলারকে ইয়র্কারে বোল্ড করেন পেসার হাসান মাহমুদ। পাঁচ নম্বরে নেমে ৪ রান করেন বাটলার।
সাকিব ও হাসানের মত প্রথমবারের মত বল করতে এসেই নবম ওভারে উইকেট তুলে নেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। সুইপ করে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে দ্বাদশ ফিল্ডার শামীম হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মঈন। আউট হওয়ার আগে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে ১৫ রান করেন মঈন।
৭ রানের ব্যবধানে পরপর তিন ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে ইংল্যান্ড। দলকে চাপমুক্ত করতে পঞ্চম উইকেটে ৩২ বলে ৩৪ রান যোগ করেন বেন ডাকেট ও স্যাম কারান। ১৫তম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমনে এসে ২ উইকেট তুলে নেন মিরাজ। দ্বিতীয় বলে কারানকে ১২ রানে এবং চতুর্থ বলে ক্রিস ওকসকে শূন্যতে স্টাম্পড আউট করলে ৯১ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
ক্রিস জর্ডানকে নিয়ে দলের স্কোর ১শতে নেন ডাকেট। ১৭তম ওভারে শেষবারের মত বল হাতে এসে জর্ডানকে ৩ রানে আউট করে ইনিংসে চতুর্থ উইকেট নেন মিরাজ। ক্যারিয়ার সেরা ৪ ওভার বল করে ১২ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত পুরো ২০ ওভার খেলে ১১৭ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বনি¤œ রান ইংলিশদের। ডাকেটকে ২৮ রানে থামান পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। অভিষিক্ত রেহান আহমেদ ১১ ও জোফরা আর্চার খালি হাতে রান আউট হন।
মিরাজের পর বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন-মুস্তাফিজ-সাকিব-হাসান ১টি করে উইকেট নেন।
সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে ১১৮ রানের টার্গেটে তৃতীয় ওভারে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কারানের শর্ট বলে পুল করে ডিপ স্কয়ার লেগে সল্টকে ক্যাচ দিয়ে ৯ রানে থামেন ওপেনার লিটন দাস।
লিটনের মত ৯ রানে আউট হন আরেক ওপেনার রনি তালুকদারও। আর্চারের বলে মঈনকে ক্যাচ দিয়ে আউট রনি আউট হলে ২৭ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আগের ম্যাচের হিরো নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। সাবধানে খেলতে থাকেন তারা। ৩টি চারে জুটিতে ৩১ বলে ২৯ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন শান্ত-হৃদয়।
নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে হৃদকে ১৭ রানে থামান অভিষেক হওয়া স্পিনার রেহান। ১৮ বল খেলে ২টি চার মারেন হৃদয়।
দলী ৫৬ রানে হৃদয় ফেরার পর দলের রানের গতি বাড়ান শান্ত ও মিরাজ। ১৪ ও ১৫তম ওভারে ১২ রান করে যোগ তরেন তারা। জুটিতে ৩২ বলে ৪১ রান যোগ হবার পর আর্চারের বলে আউট হন মিরাজ। ২টি ছক্কায় ১৬ বলে ২০ রান করেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া এ অলরাউন্ডার।
উইকেটে এসে ৩ বলের বেশি খেলতে পারেননি সাকিব। মঈনের বলে লং-অফে জর্ডানকে ক্যাচ দিয়ে শূন্য হাতে বিদায় নেন সাকিব। দলীয় ১০৫ রানে আর্চারের বলে আফিফ ২ রানে বোল্ড হলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় ম্যাচ জিততে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ১৩ বলে ১৩ রান দরকার পড়ে টাইগারদের।
সপ্তম উইকেটে ৬ বল খেলে অবিচ্ছিন্ন ১৫ রান তুলে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের স্বাদ দেন শান্ত ও তাসকিন। জর্ডানের করা ১৯তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে ২টি চারে জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন। শান্ত ৩টি চারে ৪৭ বলে অপরাজিত ৪৬ রান করেন । ৩ বলে অপরাজিত ৮ রান করেন তাসকিন। ইংল্যান্ডের আর্চার ১৩ রানে ৩ উইকেট নেন।
আগামী ১৪ মার্চ মিরপুরে হবে সিরিজে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।
স্কোর কার্ড :
ইংল্যান্ড ব্যাটিং ইনিংস :
ফিল সল্ট ক এন্ড ব সাকিব ২৫
ডেভিড মালান ক হাসান ব তাসকিন ৫
মঈন ক শামীম ব মিরাজ ১৫
জশ বাটলার বোল্ড ব হাসান ৪
বেন ডাকেট বোল্ড ব মুস্তাফিজুর ২৮
কারান স্টাম্প লিটন ব মিরাজ ১২
ওকস স্টাম্প লিটন ব মিরাজ ০
জর্ডান ক রনি ব মিরাজ ৩
রেহান রান আউট ১১
আদিল রশিদ অপরাজিত ১
আর্চার রান আউট ০
অতিরিক্ত (লে বা-৭, ও-৬) ১৩
মোট (অলআউট উইকেট, ২০ ওভার) ১১৭
উইকেট পতন : ১/১৬ (মালান), ২/৫০ (সল্ট), ৩/৫৫ (বাটলার), ৪/৫৭ (মঈন), ৫/৯১ (কারান), ৬/৯১ (ওকস), ৭/১০০ (জর্ডান), ৮/১১৪ (ডাকেট), ৯/১১৬ (রেহান), ১০/১১৭ (আর্চার)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৪-০-২৭-১ (ও-৩),
মুস্তাফিজুর : ৪-০-১৯-১ (ও-১),
নাসুম : ১-০-১৩-০,
সাকিব : ৩-০-১৩-১ (ও-১),
হাসান : ২-০-১০-১,
মিরাজ : ৪-০-১২-৪,
নাজমুল : ১-০-৯-০,
আফিফ : ১-০-৭-০ (ও-১)।
বাংলাদেশ ব্যাটিং ইনিংস :
লিটন দাস ক সল্ট ব কারান ৯
রনি তালুকদার ক মঈন ব আর্চাও ৯
নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত ৪৬
তৌহিদ হৃদয় ক ওকস ব রেহান ১৭
মিরাজ ক রশিদ ব আর্চার ২০
সাকিব ক জর্ডান ব মঈন ০
আফিফ বোল্ড ব আর্চার ২
তাসকিন অপরাজিত ৮
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা -২ ও-৩) ৯
মোট (৬ উইকেট, ১৮.৫ ওভার) ১২০
উইকেট পতন : ১/১৬ (লিটন), ২/২৭ (রনি), ৩/৫৬ (হৃদয়), ৪/৯৭ (মিরাজ), ৫/১০০ (সাকিব), ৬/১০৫ (আফিফ)।
ইংল্যান্ড বোলিং :
কারান : ৩-০-১৮-৪ (ও-১),
ওকস : ১-০-২১-০,
আর্চার : ৪-০-২৭-১,
মঈন : ৪-০-২৭-১,
রশিদ : ৪-০-২৫-১ (ও-২),
রেহান : ২-০-১৬-০.
জর্ডান : ০.৫-০-১৫-০।
ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা :মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।