1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

রমজান পালনে মূল্যস্ফীতি জ্বালাবে!

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩
  • ৭৭ বার দেখা হয়েছে

ফেদেরিকা মার্সি

আমরা জানি, এশিয়া ও আফ্রিকার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ অপুষ্টির শিকার। ডব্লিউএফপির অর্থনীতিবিদ ফ্রেডরিক গ্র্রেব এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এশিয়া ও আফ্রিকার বহু পরিবার অন্যান্য পণ্যসামগ্রী ও পরিষেবার ব্যয় কমাতে বাধ্য হবে।’ গ্র্রেবের কথাকে না মেনে উপায় নেই। এর কারণ, নিত্যদিনের খাবারের সংস্থান করতে গিয়ে দৈনন্দিন আয়ের ৫০ শতাংশই খরচ হয়ে যায় পরিবারগুলোর। এ অবস্থায় রমজানে খাদ্য ও পানীয়ের উচ্চ খরচ সামলে খেজুর, কেক, বিস্কুট, চিনিযুক্ত জুসসহ ঐতিহ্যবাহী আইটেমগুলো কমাতে বাধ্য হবে মুসলমানরা। এই যখন অবস্থা তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের জীবনযাত্রার ওপর ব্যয়-সংকট যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, তা থেকে উত্তরণের কি কোনো উপায় আছে? এক্ষেত্রে বৈশ্বিক দাতব্য সংস্থাগুলোরই-বা কতটা ভূমিকা পালন করার আছে? এসব প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তরে বলা যায়, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি কিংবা নিত্যপণ্যসামগ্রীর লাগামহীন দাম বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের যে সব দেশ বেশি কাহিল অবস্থায় পতিত হয়েছে, সে সব দেশের বহু মানুষ ‘ঐতিহ্যগত রমজান উদযাপন’ থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। আগেকার দিনগুলোতে রমজান মাসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া বিভিন্ন সংস্থা, গোষ্ঠী বর্ধিত চাহিদা পূরণে হিমশিম খাবে—চিত্র সে রকমটাই। তবে আশার কথা, বিশ্বের সব সম্প্রদায় একসঙ্গে সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রত্যয়ী হলে কোনো বাধাই বাধা নয়।

যাহোক, মাহে রমজানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিরাজমান অবস্থার দিকে কিঞ্চিত দৃষ্টিপাত করা যাক—

মধ্যপ্রাচ্য :মানুষের পকেটে টাকা নেই

বৈশ্বিক শক্তিগুলোর রেষারেষি ও স্থানীয় নানা কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি বর্তমানে অনেকটাই ভগ্ন। খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই, এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুদ্ধ-সংঘাত। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে সিরিয়ার ৯০ শতাংশেরও বেশি নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে এ দুটি দেশের কিছু অঞ্চলের অবস্থা করুণ আকার ধারণ করেছে। এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকট খারাপ অবস্থায় উপনীত হয়েছে ইতিমধ্যে। গত মাসে তুরস্কে মূল্যস্ফীতির হার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশের ঘরে! মুদ্রাস্ফীতি ঘিরে ধরেছে মিশরকেও। এ দেশে হু হু করে বেড়ে চলেছে জিনিসপত্রের দাম। ফেব্রুয়ারিতে মিশরে নিত্যপণ্যের দাম প্রায় ৩২ শতাংশ বেড়ে যায়। অর্থাৎ নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা কতটা খারাপ হতে চলেছে, তা সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিতে চলেছে সরকার। রমজানে বাজারগুলোতে বিভিন্ন ছাড়ের বন্দোবস্ত করছে কর্তৃপক্ষ। পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে গত কয়েক মাস আগে থেকে ময়দা, মাংস ও পাস্তার মতো খাদ্য উপাদান ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে বিক্রি করে আসছে সরকার। তবে এতেও লাগাম টানা যাচ্ছে না মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনবহুল এ দেশটির পণ্যমূল্যের।

ভালো নেই লেবাননও। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক—সবদিক থেকে গভীর সংকটে নিপতিত বৈরুত। সঙ্গে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর ভার। এসবের অভিঘাতে ট্রিপল-ডিজিট স্পর্শ করেছে লেবাননের মুদ্রাস্ফীতি, যা জানুয়ারিতে উঠে যায় ১২৩ শতাংশে! দাতব্য সংস্থা আমেরিকান নিয়ার ইস্ট রিফিউজি এইডের এক হিসাব অনুসারে, এবারের রমজানে লেবাননের ৮০ শতাংশ মানুষের কাছে ‘ঐতিহ্যবাহী ইফতার’ অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠবে। ডলারের বিপরীতে লেবাননের মুদ্রার দাম ব্যাপক হারে পড়ে গেছে। ফলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে লেবাননের নাগরিকদের বেশ গলদঘর্মই হতে হবে। মোটকথা, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মানুষের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। নিম্ন-মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষকে জিজ্ঞাসা করলে একটা উত্তরই পাওয়া যাবে—‘কাছে আর টাকা নেই।’

এশিয়া :দৈনিক আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি

মূল্যস্ফীতর ভারে কাঁপছে এশিয়ার দেশ পাকিস্তান! এ দেশের ২০ কোটির বেশি মানুষ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট! গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি প্রায় অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এমনিতেই তীব্র ঋণ সংকটে কার্যত পঙ্গু ইসলামাবাদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ দেশের অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ বন্যার শিকার হয়ে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি পানির নিচে চলে যাওয়ায় দেশটিতে এবার ফসল উৎপাদন কম হয়েছে অন্যান্য বারের চেয়ে। ফলে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্যসংকট। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, বহু পরিবার সন্তানের মুখে একবেলা আহার তুলে দিতেই হিমশিম খাচ্ছে! এই অবস্থায় রমজানে অনেকের হতাশ হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। লক্ষণীয়, পাকিস্তান সরকারের ভর্তুকিযুক্ত আটাও এখন কয়েক গুণ বেশি মূল্যে কিনতে হচ্ছে। ২০ কেজির আটার ব্যাগ আগে ৬০০ টাকায় কিনতে পাওয়া গেলেও এখন তার দাম ১১০০ টাকা! অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, রমজান জুড়ে খাদ্যপণ্য বেশি পরিমাণে কেনার ফলে পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, পাকিস্তানের জনগণের এবারের রমজান কেমন কাটবে, তার আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে ভালোমতোই।

বাস্তব চিত্র হলো, এশিয়ার অন্যান্য অংশেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজ করছে তীব্র সংকট। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ ভোক্তা গত বছরের তুলনায় এই রমজানে কেনাকাটা বাবদ কম খরচ করার পরিকল্পনা করছেন। ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রাস্ফীতির হারও কম নয়। তাছাড়া উদ্বেগজনক খবর হলো, রমজানের আগেই দেশটিতে খাদ্য ও পানীয়ের দাম কয়েক দফা বেড়ে গেছে। রমজানে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্রের দামও যে লাফিয়ে বাড়বে, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না!

খুব একটা ভালো নয় বাংলাদেশের অবস্থাও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, বিস্কুট, রুটি, তেলসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা গতবারের তুলনায় এবারের রমজানে ২০ শতাংশের মতো কমে যাবে। সত্যিই যদি তাই হয়, তবে তা সবার জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে বটে। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও বাড়তি দামে নিত্যপণ্য কিনতে হলে বেকায়দায় পড়ে যাবে মানুষজন। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার তুলনামূলক কম—৯ শতাংশেরও নিচে। বিগত এক দশক ধরে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি খুব একটা না বাড়লেও নিত্যপণ্যের বাজার থেকে উত্তাপ যেন সরেই না! অর্থাৎ রমজান জুড়ে জনগণ স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্যসামগ্রী কেনাকাটা করতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়! উপরন্তু অস্বস্তি রয়েছে আরেকটি বিষয়ে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য রমজান মাস ‘কঠিনতর’ হয়ে উঠবে! ডব্লিউএফপি কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে বটে, কিন্তু তাতে খুব একটা কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

আফ্রিকা :চাহিদা অনেক বেশি, কিন্তু জোগান নেই

কেনিয়ায় বর্তমানে ১৭ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। এ দেশে পণ্যের দাম এতটাই বেশি যে, অনেক কেনিয়ান দিনে তিন বেলা খাবার পান না! দেশটিতে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিশেষ করে তীব্র খরা পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিকে অস্থির করে তুলেছে। মার্চ থেকে জুনের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কেনিয়ান পর্যাপ্ত খাবার ও জল পাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন একটি অবস্থায় দেশটিতে মানুষের রমজান কেমন কাটবে, তা আর বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ান বাহিনীর আগ্রাসনের আগে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আফ্রিকান দেশগুলো ৪০ শতাংশের বেশি গম আমদানি করত। এখন যেহেতু সে পথ কার্যত বন্ধ, তাই রমজানে এ অঞ্চলের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়বে অনিবার্যভাবে। মন্দার মুখে পড়া আফ্রিকার অর্থনীতি দেখে এমন ধারণা করা হচ্ছে, ঐতিহ্যগতভাবে রমজানে দেওয়া জাকাত সহায়তাও কমিয়ে দিতে বাধ্য হবেন ধনী মুসলমানরা! এ অঞ্চলে মূলত প্রায় সব পণ্যের জোগান চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র্র :অবস্থা শোচনীয়!

চলমান বৈশ্বিক সংকট আঘাত করছে পশ্চিমা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কেও। মার্কিন দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে ইফতার বিতরণের জন্য দুটি ইসলামিক দাতব্য সংস্থার সঙ্গে রমজান মাস জুড়ে যৌথভাবে কাজ করবে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। যৌথভাবে ইফতার বিতরণ করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—ভাবা যায়! যুক্তরাজ্যের জাতীয় জাকাত ফাউন্ডেশনের সিইও জানিয়েছেন, ‘জাকাত সহায়তার জন্য প্রতি ৪০ মিনিটে একটি করে নতুন অনুরোধ পাচ্ছি। এতটা হাহাকার অবস্থা আগে কখনো দেখিনি!’ যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দ্রব্যমূল্যের দামও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। আছে সরবরাহ ঘাটতি। সব মিলিয়ে অবস্থাকে ঘোলাটেই বলতে হয়। ফলে শুধু রমজান নয়, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ঈদের প্রস্তুতিতেও। ভেড়ার মাংসের বাজার থেকে মুরগির হাটের দিকে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ! অর্থাৎ, সহজেই বোঝায় যায়, কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে!

লেখক: লেবানন, তিউনিসিয়া, ফিলিস্তিনি প্রভৃতি অঞ্চলে দায়িত্ব পালনকারী আলজাজিরার সাংবাদিক। আলজাজিরা, ভাইস ইউকে, ওপেন ডেমোক্রেসি, দ্য মিডল ইস্ট ম্যাগাজিন, ওয়্যার্ডসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিয়মিত কলাম লেখক

আলজাজিরা থেকে অনুবাদ: সুমৃত্ খান সুজন

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com