রাজশাহীতে এক নারী চিকিৎসককে আয়কর ফাঁকির মামলার ভয় দেখিয়ে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া। তবে ৫০ লাখ টাকায় দফারফা হয়। কথা ছিল- চিকিৎসক ঘুষের প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকা উপ-কর কমিশনারকে দেবেন মঙ্গলবার। সে অনুযায়ী তিনি টাকাও দেন। টাকা দেওয়ার পর ওত পেতে থাকা দুদকের টিম হানা দেয় উপ-কর কমিশনারের কক্ষে। এরপর ঘুষের ১০ লাখ টাকামহ তাকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দুদকের এই অভিযান চলে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা যখন মহিবুল ইসলামের কক্ষে অভিযান চালাচ্ছিলেন তখন আয়কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। সেখানে দুদক কর্মকর্তা ও আয়করের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। পরে দুপুর আড়াইটার পর পুলিশের সহায়তায় দুদক কর্মকর্তারা মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যান।
জানা গেছে, রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেন, কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া তার কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। চাহিদা মতো ঘুষ না দিলে তিনি মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
মুহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে দুদক
ডা. ফাতেমা দুদককে আরও অভিযোগ করেন, শেষপর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে মঙ্গলবার ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা তার স্বামী ইউসুফ ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মহিবুল ইসলামের দপ্তরে যান। তারা ঘুষের প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকা মহিবুলের হাতে তুলে দেন। টাকা নিয়ে মহিবুল ইসলাম তার টেবিলের ড্রয়ারে রাখেন। এরপরই দুদক টিম আচমকা হানা দেয়। তারা আগে থেকেই মহিবুলের কক্ষের আশেপাশে সাদা পোশাকে ওত পেতেছিলেন। কক্ষে প্রবেশ করেই তারা ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। এ সময় আতঙ্কে মহিবুল চেঁচামেচি শুরু করে দেন। তখন তার চিৎকারে ছুটে আসেন কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে এক পর্যায়ে দুপক্ষের হাতাহাতি হয়। পরে খবর পেয়ে রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে মহিবুলের কক্ষে অবস্থান করে দুদক টিম। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক কামরুল হাসান ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান। পরে মহিবুলের টেবিলের ড্রয়ার থেকে ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদক।
দুদকের অভিযান শেষে দুদকের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান জানান, ডা. ফাতেমার ৫ বছরের পুরনো অভিযোগ নিয়ে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া। টাকা না দিলে তাকে মামলারও ভয় দেখান। তবে ফাতেমা সিদ্দিকা প্রথম কিস্তিতে ১০লাখ টাকা দিয়েছেন তাকে। সেই টাকাসহ মহিবুলকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাজপাড়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মারধর করিনি। আয়কর অফিসের কর্মীরাই ঘরে ঢুকে আমাদের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করেন। তখন আমরা দরজা বন্ধ করে দেই। তারপর তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আক্রমণ করেন। মারামারি নয়, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে মহিবুল ইসলামের গলায় একটা আঁচড় লেগেছে। ধস্তাধস্তির কারণে আমাদেরও তিনজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।’
মহিবুল ইসলামকে আটক করে দুদক কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় তিনি বলেন, ‘ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা আছে তিনি তার চেয়েও বেশি টাকার জমি কিনছেন। তার ২৬ কোটি টাকার আয়করের গড়মিল আছে। এ জন্য তার কাছ থেকে আয়কর আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এ জন্য তাকে ফাঁসানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে থানায় অভিযোগ আ. লীগ নেতার
মহিবুল ইসলাম দাবি করেন, ‘অভিযানের সময় দুদকের সঙ্গে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকাও ছিলেন। এর আগে ডা. ফাতেমা যখন আসেন, তখন তিনি অফিসের ভেতরে ছিলেন না। অন্য রুমে ট্রেনিংয়ে ছিলেন। পরে তাকে অফিসের বাইরে থেকে জোর করে কক্ষের ভেতরে ঢোকানো হয়। ডা. ফাতেমা তার টেবিলের ওপর টাকাগুলো রেখেছিলেন।’
আয়কর অফিসে সাংবাদিকরা ডা. ফাতেমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে তিনি কোনো কথা বলেননি।
তবে কর কমিশনার শাহ আলী সাংবাদিকদের জানান, অভিযানের বিষয়টি দুদকের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক তাকে জানিয়েছিলেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতার করেছেন। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই।’