ঢাকা-১৭ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ ও দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এই নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে ঢাকা-১৭ আসন উপনির্বাচন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে বলে নেতাদের হুশিয়ার করেন তিনি।
সভায় তৃণমূল থেকে শুরু করে দলকে আরও বেশি সংগঠিত করতে প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁঁকজমকভাবে পালনের বিষয়ে নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান।
সূত্র জানায়, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সমবেতদের উদ্দেশে একা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই যোগ্য আছেন, ক্ষেত্রবিশেষে বেশি যোগ্য। কিন্তু মনোনয়ন তো একজনকে তো দিতে হবে। যাদের মনোনয়ন দিতে পারিনি তাদের হয়তো কষ্ট লাগবে, নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা অবশ্যই সামনের দিনে তাদের বিষয়টা দেখব। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সবাই ভালো থাকবেন। ক্ষমতায় না এলে সবার কষ্ট হবে। তিনি বলেন, আরাফাত তরুণ প্রজন্মের বুদ্ধিজীবী। তিনি অনেকদিন ধরেই দেশের নানা ইস্যুতে কাজ করছেন। আগামী দিনে তাকে ‘তথাকথিত’ বুদ্ধিজীবীদের বিপরীতে কাজে লাগাবেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, আলোচনার একপর্যায়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আরাফাত আমার পরিবারের সদস্য। ওর বিষয়ে আমি আগেই ভেবে রেখেছিলাম। পরে মনোনয়ন বোর্ডের সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের মতো ঢাকা-১৭ আসন উপনির্বাচন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। তোমরা সবাই মিলে ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণের মন জয় করে আরাফাতকে জিতিয়ে আনো। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতেও দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ’৭৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়েছে, আমরা তার প্রতিশোধ নেইনি। আমরা অন্যায়ের জবাব দিচ্ছি উন্নয়ন করে। উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। এ সময় তিনি দলে দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা যেন অবহেলিত না হয়, সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে নেতাদের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশকে নিয়ে নানা চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকেই চায় না আমাদের দেশটি এগিয়ে যাক। তিনি বলেন, যাদের উসকানিতে বিএনপি আজ লাফাচ্ছে তারা; কিন্তু তাদের ক্ষমতায় বসাবে না। তারা শুধু তাদেরকে ব্যবহার করবে।
বৈঠকসূত্র জানায়, প্রতি শনিবার প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের ডেকে এনে কথা বলবেন শেখ হসিনা। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁঁকজমকভাবে পালন করতে হবে। করোনার জন্য গত কয়েক বছর দলের নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দ করতে পারেনি। এবার যেন ভিন্ন আমেজ ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে পালন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল ফারুখ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বৈঠকে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ২২ জনের মধ্যে ১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। দুজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং অন্য দুজন প্রার্থী দেশের বাইরে আছেন। তবে সভায় কাউকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সভা শেষে সব নেতার সঙ্গে আলাদা আলাদা ছবি উঠান শেখ হাসিনা। ছবি তোলেন গুলশান ও বনানী এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতারাও।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, আজকের বৈঠক ছিল ঢাকা-১৭ আসনে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে। নেত্রী বলেছেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে ভোটারদের মন জয় করে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে হবে।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলেও তিনি একই কথা বলেন। তিনি জানান, দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগ ও দলের ভ্রাতৃপ্রতিম এবং সহযোগী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।