জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি নাগরিকের তথ্য সুরক্ষায় নতুন একাধিক নীতিমালা প্রণয়নের কথা ভাবছে যুক্তরাজ্য। এ সংক্রান্ত কার্যক্রমও শুরু করেছে দেশটি।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা এসব নীতিমালা পশ্চিমা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা তৈরি করতে পারে। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠান এখন যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে বা ভাবছে।
বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী শরতেই হয়তো অনলাইন সেইফটি বিল পাস করবে যুক্তরাজ্য। সেখানে শিশু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে শক্ত নজরদারিতে আনা হবে। উচ্চ আর্থিক জরিমানা ও কারাবরণের মতো সাজাও থাকবে। কোম্পানির বিরুদ্ধেও নেয়া হবে কঠোর পদক্ষেপ।
নীতিমালার মধ্যে একটিতে রয়েছে, যদি কখনো জাতীয় নিরাপত্তা ও শিশু সুরক্ষায় ঝুঁকির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোয় হোয়াটসঅ্যাপের মতো এনক্রিপটেড মেসেজগুলোও পড়া যাবে। এর পরিচালনা বা তদন্ত কার্যক্রম তুলে দিতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে। এনএসপিসিসি সম্প্রতি এনক্রিপটেড মেসেজকে শিশু হয়রানির প্রধান মাধ্যম হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটি সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা টুল হিসেবে পরিগণিত হয়।
প্রস্তাবিত নিরাপত্তা বিল পাস হলে হোয়াটসঅ্যাপ ও সিগন্যাল উভয়ই যুক্তরাজ্যের বাজার ত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বর্তমান সময়ের মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ, প্রোটন ও সিগন্যালে এনক্রিপশন সুবিধা দেয়া হয়। অর্থাৎ মেসেজের বিষয়বস্তু ব্যবহারকারী ছাড়া আর কেউ দেখতে পারবে না। এমনকি প্লাটফর্মগুলোও দেখতে পারবে না। নিরাপত্তা বিলের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল মার্কেট বিল। সংসদে প্রস্তাবটি এখন পাস হওয়ার পথে। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা ও তাদের পরিচালনায় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করা হবে। কোনো কোম্পানি যদি প্রণীত নীতি লঙ্ঘন করে, তাহলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। বেশকিছু সংস্থা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তারা মনে করে এর মাধ্যমে একটা বিশেষ গোষ্ঠীকে অপরিমেয় ক্ষমতা তুলে দেয়া হবে।
মাইক্রোসফট যখন ভিডিও গেম প্রতিষ্ঠান অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডকে অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছিল, তখন বিপত্তি ঘটায় কম্পিটিশন অ্যান্ড মার্কেট অথরিটি (সিএমএ)। প্রতিক্রিয়ায় মাইক্রোসফট ক্ষোভ প্রকাশ করে। প্রধান নির্বাহী ব্র্যাড স্মিথ দাবি করেন, এখানে পাঠানো সংবাদ স্পষ্ট। যুক্তরাজ্যের চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় ব্যবসা করা এখন সুবিধাজনক।
স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাজ্যে নিজেদের পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা উচ্চারণ করছে। ঋষি সুনাক নিজে প্রযুক্তিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরিষেবা নেই বরং ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সদিচ্ছা দিনকে দিন তিক্ততায় রূপ নিচ্ছে।