1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

হাতের মুঠোয় সর্বনাশ

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৯
  • ৯২ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীর একটি নামিদামি স্কুলে পড়ে রিপন। বয়স ৮ বছর। পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। তার বাবা-মা দুজনই একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। অফিসে যাওয়ার পথে সকাল ৮টায় স্কুলে রেখে যান সন্তানকে। তবে ক্লাস শেষে একা একা বাসায় ফেরে দুপুর ২টায়। বাসায় এসেই রিপন হাতে তুলে নেয় স্মার্টফোন। খাওয়া ও পড়ার টেবিল থেকে শুরু করে বিছানা পর্যন্ত বিচরণ তার স্মার্টফোনে। এক মুহূর্তের জন্যও ফোন হাতছাড়া করে না। এমনকী খেলাধুলা করতে বাসার বাইরে বের হওয়ার মনোযোগও নেই তার। কারণ সোহাগ বাসায় বসে প্রতিনিয়ত ফোনে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন রকমের গেমস খেলে। এ ছাড়াও সে পড়ার চেয়ে ফেসবুক, ইউটিউব ও গেমস খেলায় বেশি সময় ব্যয় করে। তার খাওয়ার রুচিও কমে গেছে। শুধু আরিফুল নয়, এ রকম লাখ লাখ শিক্ষার্থী ফেসবুকে আসক্ত হওয়ায় সুষ্ঠু চিন্তা করতে পারছে না। এমন আসক্তি এখন বড়দের থেকে শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তববাদী জীবন থেকে পরাবাস্তব জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম নামের ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো আর হোয়াটসআপের নেশা। প্রায় সব বয়সী, বিশেষ করে তরুণদের মন ও মগজে সারা দিন, সারা রাত ঘুরপাক খাচ্ছে ইন্টারনেটের অবাধ দুনিয়া। এক ছাদের নিচে পাশাপাশি বসবাস করেও পরিবারের কারও সঙ্গে কারও কোনো কথা নেই। মোবাইলের স্ক্রিনে তীক্ষè নজরেই চলে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের সামনে বসে আত্মচর্চায় ব্যস্ত থাকছেন সবাই। তারা মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষায় মাধ্যমটি যতটা না সহায়তা করছে তার চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে অসামাজিক হতে। যতই দিন যাচ্ছে গভীর এমন মনোযোগের বস্তুটি নীতি- নৈতিকতাহীন ও এক মুমূর্ষু জাতি গঠনের পাল্লাকেই কেবল ভারি করছে। যেখানে কোনো স্বপ্ন নেই, নেই পৃথিবী গড়ার মন্ত্র। আছে কেবল হতাশা আর অন্ধকার জগতের হাতছানি। ইন্টারনেট লাইভ স্ট্যাটাসের হিসাবে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ২ কোটি ১০ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ। এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাংলাদেশে কতজন ফেসবুক ব্যবহার করে, সেটির কোনো নির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত-সংশ্লিষ্টদের হিসাবে, বাংলাদেশ থেকে দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টধারী রয়েছেন। নিয়মানুযায়ী ১৩ বছরের নিচের কেউ ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে না। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪০০ জিবিপিএস (গিগা বিটস প্রতি সেকেন্ড) ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথ ব্যবহার হয়। তবে বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোট ইন্টারনেট ডেটার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারে খরচ হয়। সে হিসাবে মোট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথের ১০০ জিবিপিএস ব্যবহার হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। তাই দিনে ছয় ঘণ্টা করে ফেসবুক বন্ধ থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহারে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। ডিসএবিলিটি অ্যান্ড ট্রমা জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, ফেসবুক ফিড নিয়ে ব্যস্ত থাকার ফলে মস্তিষ্কে যে অনুভূতি হয়, কোকেন ঠিক একই ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করে। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক প্রফেসর অফটির টুরেল বলেন, যারা ফেসবুকে প্রবেশ না করে থাকতে পারেন না তাদের মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটার অংশে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে। কোকেন নিলে মস্তিষ্কের ঠিক একই অংশে প্রায় একই ধরনের কর্মকা- চলে। গবেষণায় শিক্ষার্থীদের একটি প্রশ্নের তালিকা দেওয়া হয়। সেখানেই তারা ফেসবুকের প্রতি আসক্তির কথা স্বীকার করেন। এ সময় তাদের বিভিন্ন ছবি দেখানো হয়। বলা হয়, তাদের পছন্দের ছবি প্রদর্শনমাত্র একটি বাটনে চাপ দিতে বলা হয়। দেখা গেছে ফেসবুকের ছবি দেখামাত্র কয়েকজন ওই বাটনে চাপ দিয়েছেন। এরা আগে থেকেই ফেসবুকে আসক্ত। গবেষকরা দেখেছেন, মস্তিষ্কের এমিগডালা অংশকে উত্তেজিত করে ফেসবুক। এই অংশ ঘটনা, আবেগ ইত্যাদির গুরুত্ব তুলে ধরে। কয়েকজন অংশগ্রহণকারী ফেসবুকে ছবি দেখে এত দ্রুত ক্রিয়াশীল হয়েছেন যা রাস্তায় চলাচলের সময় নির্দেশক চিহ্ন দেখেও সতর্ক হন না। এ জন্য বিষয়টিকে ভয়ঙ্কর বলে অভিহিত করেছেন গবেষকরা। কারণ রাস্তায় চলাচলের সময় নির্দেশক চিহ্ন না দেখে মোবাইলে ফেসবুকের নোটিফিকেশন দেখতে থাকলে তা দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ব্যাপারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফেসবুক হচ্ছে আসক্তি। এটি মাদক নেশার চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগ সময় ফেসবুকে কাটিয়ে দিচ্ছে। ফেসবুক আসক্তি বুঝতে বিশেষজ্ঞদের অনেক সময় লেগে যায়। কারণ শারীরিক জখম হলে দেখা যায় কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহারে মানসিক রোগী হলে তা তাৎক্ষণিক বোঝা যায় না। ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক সহায়তাও প্রয়োজন। এটি সম্ভব না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক মনে করেন, ফেসবুক বন্ধ করার কিছু নেই। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে বাবা-মার ভোটার আইডি দিয়ে যেন ছেলেমেয়ে ফেসবুক, ইউটিউব খুলতে না পারে সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া ফেসবুক আসক্তি থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখা সম্ভব হবে না। তিনি মনে করেন, বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোন রয়েছে তারা প্রত্যেকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বই পড়ার পেছনে ব্যয় না করে ফেসবুকে ব্যয় করছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com