বহুমেরুর বিশ্বে বিভাজন বাড়িয়ে দিয়েছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ। উন্নত দেশগুলো নিজেদের নীতিতে পরিবর্তন আনায় আরও প্রকট হচ্ছে বিভাজন। এমন প্রেক্ষাপটে বিভাজন কমিয়ে ঐক্যের বার্তায় আজ শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশন (ইউএনজিএ)। জাতিসংঘ বলছে, টেকসই উন্নয়নের বেশ কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। জলবায়ু সংকট, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, মন্দা, যুদ্ধ এবং কোভিডের প্রভাবে দারিদ্র্য বরং বেড়েছে। চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা চার বছর আগের তুলনায় এখন বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের মাত্র ৩০ শতাংশ দেশ দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে।
৭৮তম ইউএনজিএ অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কে জড়ো হচ্ছেন বিশ^ নেতারা। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আজ থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) সামিট। এবারে সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ^াস পুনঃস্থাপন এবং বৈশি^ক সংহতির পুনর্জাগরণের আহ্বানের ডাক নিয়ে বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীজনরা অংশ নেবেন। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এসডিজি সামিটে অংশ নেবেন। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গতকালই নিউইয়র্কে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী আজ নিউইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে ইউএনআইডিও এবং ডেলয়েট আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। এ ছাড়া ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে ‘এসডিজিস সামিট-লিডারস ডায়ালগ ৪’ শীর্ষক আরেকটি সম্মেলনেও ভাষণ দেবেন তিনি। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগত নৈশভোজে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এর আয়োজন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য অর্থায়নের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রাষ্ট্রদূত গর্ডন ব্রাউন এবং নিউইয়র্কের লেক্সিংটন ভেন্যুর গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশনের এক্সিকিউটিভ চেয়ার সারাহ ব্রাউন।
জাতিসংঘ মনে করে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখন আর সিদ্ধান্তহীনতা কিংবা উদাসীন থাকার সময় নেই। প্রকৃত ও বাস্তব সমাধানের জন্য একত্রিত হওয়ার সময় এসেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, বিশ্ব নেতারা এমন এক সময়ে একত্রিত হচ্ছেন যখন মানবতা গুরুতর জলবায়ু পরিস্থিতি থেকে শুরু করে ক্রমবর্ধমান সংঘাত, বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকট, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং নাটকীয় প্রযুক্তিগত বাধার মতো বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি বলেন, মানুষ এই জগাখিচুড়ি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে নেতাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তবুও এই এবং আরও অনেক কিছুর মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক বিভাজন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাকেও হ্রাস করছে। এবারের সামিটে এসডিজি অর্জনে সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী দিনের প্রত্যয়ও ব্যক্ত করবেন বিশ্ব নেতারা।
এবারের জাতিসংঘের সাধারণ বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন-অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্বাস্থ্য খাতে সাফল্য এবং বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু ন্যায়বিচারের মতো বিষয় তুলে ধরবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল জাতিসংঘের সদর দপ্তর সিআর-১৬তে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সভাপতির আয়োজনে একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে ভাষণ দেবেন। একই দিনে শেখ হাসিনা সিআর-১১, ইউএনএইচকিউয়ে বাংলাদেশ, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, ভুটান, চীন, মালয়েশিয়া, চ্যাথাম হাউস ও সূচনা ফাউন্ডেশনের সহ-আয়োজিত চিকিৎসা পরিসেবাভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টেও যোগ দেবেন।
২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিতর্কে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন। একই দিনে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবের উচ্চ পর্যায়ের একটি বিষয়ভিত্তিক সম্মেলনে যোগ দেবেন। পাশাপাশি তিনি ন্যাশনাল জুরিসডিকশনের বাইরের এলাকার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য আইনের ওপর জাতিসংঘের কনভেনশনে যোগ দেবেন। ২১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে যোগ দেবেন।