এই উপসর্গকে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে অনুভব এবং প্রকাশ করে থাকে। কেউ বুকের মাঝখানে চাপ অনুভব করে, কেউ বুকে এবং পিঠে চাপ দেওয়া অনুভব করে থাকে। কারও বুকে পিঠে চাপসহ শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়। কেউ বলেন বুক অত্যন্ত ভারি অনুভব হচ্ছে। কারও কারও সারা বুকে প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হয়। এ সময় অনেকের কথা বলতে কষ্ট হয়। কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে যান বা অজ্ঞানের মতো হয়ে যান, মানে চারপাশে কী হচ্ছে বুঝতে পারছেন কিন্তু নিজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তবে এ ধরনের লক্ষণ ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে।
সাধারণত হার্টের সমস্যার জন্য এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। অত্যধিক টেনশন, দুশ্চিন্তা, উত্তেজনা, বিমর্ষ হওয়া, যে কোনো অনিশ্চয়তায় ভোগা এসব কারণে মানব শরীরে ট্রেস হরমোন নামক এক ধরনের হরমোন রক্তে নিঃসৃত হয়। এসব হরমোন নিঃসরণের মাত্রা খুব অল্প সময়ে অধিক পরিমাণে ঘটে থাকে। এসব হরমোনের প্রভাবে রক্তনালি সংকোচিত হয়ে সরু হয়ে যায় এবং রক্ত সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। হার্টের রক্তনালি সংকোচনের ফলে হার্টের রক্ত সরবরাহ কমার ফলে বুকে চাপ বা চাপা ব্যথা অনুভূত হয়। অল্প বয়স্ক ব্যক্তি বিশেষ করে নারীদের হার্টের রক্তনালি সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহও কমে যায়। ফলে রোগী অজ্ঞান বা অজ্ঞানের মতো অবস্থায় পতিত হয়। তবে প্রাকৃতিক নিয়মেই রক্তে হরমোনের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং রোগী কিছু সময় পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। মাঝবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের যাদের হার্টে রক্ত প্রবাহ এমনিতে কমে গেছে যা সাধারণভাবে হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকার জন্য পরিলক্ষিত হয় অথবা ব্লক ছাড়াও অন্য কোনো ধরনের অসুস্থতা বিদ্যমান আছে। তারা যখন কোনো ধরনের ট্রেসফুল অবস্থা মোকাবিলা করে বা স্বাভাবিক কাজের থেকে ভারী কাজ করতে যান তখনই বুক চেপে আসে, এ ক্ষেত্রেও বিশ্রাম নিলে বা ভারী কাজ থেকে বিরত হলে অল্প সময়ের মধ্যেই চাপ কমে যায় এবং রোগী স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু আবারও যদি ওইসব অবস্থায় পতিত হন তবে আবারও আগের উপসর্গ দেখা দেয়। কেউ হঠাৎ কোনো বিকট শব্দ শুনলে বা হঠাৎ কোনো দুঃসংবাদ শুনলে, কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে বুকে চাপসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এ ধরনের চাপ খুব বেশি তীব্র হলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় কখনো তীব্র চাপ, শ্বাসকষ্ট, শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়ার সঙ্গে বমি বা বমি বমি ভাব হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। এমতাবস্থায় রোগীকে খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। বুকে চাপের ধরনও স্থায়িত্ব দেখে কিছু ক্ষেত্রে হার্টের অসুস্থতার মাত্রা বোঝা যেতে পারে। যদি কারও মৃদু চাপ হয় এবং অল্প সময়ে সেরে যায়, অনেক দিন পর পর পরিলক্ষিত হয় সঙ্গে অন্য সব উপসর্গ না থাকে তবে ধরে নেওয়া যায় যে, রোগীর হার্টের অসুস্থতার মাত্রা কম আছে। তবে যাদের চাপের তীব্রতা বেশি, চাপ থেকে সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে, খুব ঘন ঘন চাপ ওঠে এবং চাপের সঙ্গে বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় ও শরীর ঘেমে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয় তবে ধরে নেওয়া যায় যে, রোগীর হার্টের অবস্থা শোচনীয়। এ ধরনের রোগী দ্রুত হার্ট স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে পারবেন। যে সব ব্যক্তি ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপ বা হাইপ্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের বেলায় এ ধরনের প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা কেউ কেউ এ ধরনের উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও উপসর্গের তীব্রতা বেশি অনুভব করতে পারবেন না এ অবস্থাকে ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি বলা হয়, ডায়াবেটিস এবং হাইপ্রেসারের রোগীদের উপসর্গ মৃদু হলেও হার্টে বড় ধরনের অসুস্থতা বিদ্যমান থাকতে পারে। তাই এ
অবস্থাতেও দ্রুত হার্টের চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
লেখক:
ডা. এম শমশের আলী
চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।