1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
সচিবালয়ে আগুন: ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত নতুন বছরে আলোচনায় থাকবে যেসব উদ্ভাবন উইকিপিডিয়া কীভাবে পরিচালিত হয়, কতটা নির্ভরযোগ্য এর তথ্য? এক্সক্লুসিভ কাটা-ছেঁড়া ছাড়ছে না ড্যাপকে সচিবালয়ে লাগা আগুন ১০ ঘণ্টা পর পুরোপুরি নিভল প্রাণঘাতী কমিয়ে শর্ট ব্যারেল অস্ত্র তিন বিভাগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আভাস জাহাজে ৭ খুন: লাশ নিতে স্বজনদের ভিড়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন ৪৩ বিলিয়নের চাপে দেশ ♦ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রকল্পে বিদেশি ঋণ কিস্তি পরিশোধের ঝুঁকি ♦ অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিশোধ করতে হবে ২.৬ বিলিয়ন, বাকি দায় যাবে নির্বাচিত সরকারের ঘাড়ে Khulna-Dhaka train services via Padma Bridge begin officially

বেশুমার চাঁদাবাজি ১৫০ খাতেদৌরাত্ম্য সর্বত্র, শীর্ষে পরিবহন সেক্টর, দৈনিক সাপ্তাহিক মাসিক হারে আদায়, একশ্রেণির পুলিশ লোভী নেতা ও জনপ্রতিনিধির পৃষ্ঠপোষকতায় চাঁদাবাজরা বেপরোয়া

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৯
  • ৭৬ বার দেখা হয়েছে
বেশুমার চাঁদাবাজি ১৫০ খাতেদৌরাত্ম্য সর্বত্র, শীর্ষে পরিবহন সেক্টর, দৈনিক সাপ্তাহিক মাসিক হারে আদায়, একশ্রেণির পুলিশ লোভী নেতা ও জনপ্রতিনিধির পৃষ্ঠপোষকতায় চাঁদাবাজরা বেপরোয়া
bd-pratidin

সাঈদুর রহমান রিমন

রাজধানীসহ সারা দেশে দেড় শতাধিক খাতে দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বেপরোয়া চাঁদাবাজি ঘটছে। এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পাঁচ শতাধিক সিন্ডিকেটের কয়েক হাজার অপরাধী। নেপথ্যের ইন্ধনদাতা হিসেবে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের লোভী নেতা। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। চাঁদার দাবি পূরণ না করলে সীমাহীন হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে নিরুপায় মানুষকে। নানা সিন্ডিকেটে বিভক্ত চাঁদাবাজরা নিজেদের রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করছে ‘লীগের সাইনবোর্ড’। ফলে স্থানীয় প্রশাসনও তাদের চাঁদাবাজি রোধের ঝক্কি-ঝামেলায় পা বাড়ায় না। অনেক ক্ষেত্রেই নির্বিঘ্ন চাঁদাবাজি চলছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জনপ্রতিনিধিদেরও একটা বড় অংশ চাঁদাবাজির অপকর্মে গোপন পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটগুলো আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাঠপর্যায়ে কারও নিয়ন্ত্রণ যেন কেউ মানছে না। যে যেভাবে পারছে চাঁদাবাজির নিত্যনতুন খাত আবিষ্কার করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে চাঁদাবাজির অপকর্মে।

টার্গেট যেসব ক্ষেত্র : ফুটপাথ ঘিরে আছে কোটি কোটি টাকার সিন্ডিকেট, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির শেষ নেই। থানার চাঁদা, ফাঁড়ির চাঁদা, ঘাট চাঁদা, স্পট চাঁদা, বোবা চাঁদা, বেকার ভাতা, ক্লাব খরচা, নিরাপত্তা ফি, শ্রমিককল্যাণ ফান্ড, মাস্তান ভাতা, নেতার সম্মানী, মহল্লা চাঁদা, অফিস সালামি ইত্যাদি নানা নামে নানা ঢঙে বছরজুড়েই চলে চাঁদার উৎসব। মূলত চাঁদা ধান্দার কাছেই জীবনযাত্রা বাঁধা পড়ে আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই চলছে চাঁদাবাজির ধকল। ব্যবসা-বাণিজ্য নিশ্চিত রাখতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেকাতে, সর্বোপরি প্রাণ বাঁচাতেও কাউকে না কাউকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। মাস্তান-সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের রক্ষা পেতে চাঁদা দিতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। রাজধানীর বাসাবাড়িতে নবজাতক জন্মালেও চাঁদার হাত বাড়ায় ভয়ঙ্কর হিজড়া বাহিনী। তারা নবজাতককে ঘিরে হৈচৈ, নাচ-গানের বিপরীতে কেবলই চাঁদা খোঁজে। মৃত্যুর পরও চাঁদার ধকল থেকে নিস্তার নেই। মসজিদের আঙিনায় জানাজা দেওয়াসহ কবরস্থানে দাফন করা পর্যন্ত সব ধাপেই সংশ্লিষ্টদের চাহিদা পূরণ করতে হয় স্বজনদের। এমনকি কবরস্থান থেকে লাশ চুরি ঠেকাতেও মাসোহারা দেওয়াটা এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজধানীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে বহুতল ভবন পর্যন্ত সর্বত্রই চলে অভিন্ন চাঁদাবাজি। পরিবহন, ডিশ, ইন্টারনেট প্রোভাইডার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, কোচিং বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতি টিকিয়ে রাখার কর্মকা-েও নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। নতুন বসতি গড়তে, বাড়ি নির্মাণে, দোকান বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে, এমনকি অনেক এলাকায় বিয়েশাদি, সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠান করতে হলেও আশপাশের চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের হাতে চাহিদামাফিক টাকা-পয়সা তুলে দেওয়াটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। মিথ্যা-হয়রানিমূলক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ডজন ডজন মামলা-ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে পালিয়ে থাকারও উপায় নেই। ফেরারি আসামিকেও পরিশোধ করতে হয় মাসোহারার চাঁদা। অন্যথায় ওয়ারেন্ট তামিলকারী পুলিশ টিমের সঙ্গে সোর্স নামের চাঁদাবাজরা আসামির খোঁজে ঘন ঘন অভিযান চালায়। ভাঙচুর ও তছনছ করে বাড়িঘর। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, গালাগাল দেয়। এসব নিপীড়ন থেকে রেহাই পেতে চাহিদামাফিক মাসোহারা প্রদানে বাধ্য হন ফেরারি আসামিরা।
ফুটপাথেই কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, শুধু গুলিস্তান-পল্টন নয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আড়াই শতাধিক পয়েন্টে ফুটপাথ এবং ২৩টি স্থানে অবৈধ হাটবাজার বসিয়ে চাঁদাবাজরা কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী, পুলিশ আর চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট এসব টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। রাজধানীর ব্যস্ততম ফুটপাথ-রাস্তায় বসে মাছ, মাংস ও মসলার ব্যবসায়ীরা জনপ্রতি দৈনিক ৬০০ টাকা করে চাঁদা দিচ্ছেন। শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি বিক্রেতারা চাঁদা দিচ্ছেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে। ভ্যানে করে যারা ফল বিক্রি করেন তারা দিচ্ছেন ১৫০ টাকা। সবজি বিক্রেতারা দিচ্ছেন ৫০-৭০ টাকা। চা-সিগারেট বিক্রেতারা ১০০ টাকা করে দিচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

প্রায় একই অবস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায়। নগরীতে পেশাদার, অপেশাদার মিলিয়ে লক্ষাধিক হকার ও ভাসমান দোকানি রয়েছেন। একেকজনের কাছ থেকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।

পরিবহন সেক্টরে বিস্তৃত চাঁদাবাজি : রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন রুটের প্রায় ১৫ হাজার বাস থেকে ১৯টি খাতে প্রতিদিন ৯ কোটি টাকা চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ হিসাবে প্রতি মাসে ২৭০ কোটি এবং বছরে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। ট্রাকচালকরা জানান, আগে সাধারণত ঢাকার একজন সার্জেন্টকে ১০০ টাকা দিয়ে স্লিপ সংগ্রহ করলে সিটির মধ্যে আর কোথাও পুলিশকে চাঁদা দিতে হতো না। কিন্তু বর্তমানে এক সার্জেন্ট অন্য সার্জেন্টের স্লিপকে পাত্তা দেন না, আলাদাভাবেই টাকা দিতে হয়। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এর প্রতিবাদ করলে হয়রানি আরও বেড়ে যায়। সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে একেকটি স্পটে ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।

নিষিদ্ধ গাড়ির অফুরন্ত চাঁদা : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার টেম্পো ও হিউম্যান হলার চলাচল করে। স্থানভেদে যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত এসব যানের প্রতিটি থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়।

পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা নিচ্ছে ‘ট্যাক্স’ : পার্বত্য জেলাগুলোয় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় ছোট্ট খুপরিঘর কিংবা একটু ভালো মানের বাড়ি সে যেমনই হোক, সেখানে বাঙালিরা বসবাস করতে গেলে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনের ক্যাডারদের। পার্বত্য অঞ্চলে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর সেখানে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চাঁদাবাজি হচ্ছে খাগড়াছড়িতে।

ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি : বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের চাঁদার হার ১০ শতাংশ করার প্রতিবাদে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে চাঁদা বৃদ্ধির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি এবং মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। এর আগে পাহাড়ি উগ্রবাদী সংগঠনের ৬০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর রবি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির বেশকিছু এলাকায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এর আগে ২০০৮ সালে তিন পার্বত্য জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালুর পর থেকে চাঁদার দাবিতে মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপহরণ করার ঘটনাও ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী আটক করেও চাঁদা দাবির ন্যক্কারজনক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মাদার বখশ্্ হলে বহিরাগত এক ছাত্রীকে আটকে রেখে চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন এক ছাত্রলীগ নেতা। খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার মুখে যেসব শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী বছরের পর বছর ধরে দেশে পা রাখতে পারছে না, ভিনদেশে স্থায়ীভাবেই বসবাস করছে, তাদের নামে বেশুমার চাঁদাবাজি চলছে এখনো। রাজধানীর বৃহত্তম পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজার এখন চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্য। মাসে এখানে চাঁদাবাজির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা নানা বাহানায় এখানে চলে চাঁদা উত্তোলন।

প্রতিমন্ত্রী পলকের চাঁদামুক্তির চমক : তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নাটোরের সিংড়া উপজেলা চাঁদাবাজি মুক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের বিরামহীন তৎপরতায় এ ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনরা দাবি করেছেন। স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছেন, প্রতিমন্ত্রী পলকের চাঁদাবাজবিরোধী কঠোর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিংড়ার পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com