অক্টোবরের শেষে মহাসমাবেশের মাধ্যমে দেশজুড়ে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়েছে। মহাসমাবেশে পুলিশ, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের পর হরতালের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। হরতাল পালনের পরই তিন দিনের অবরোধ পালন করে বিরোধীরা। হরতাল-অবরোধের চার দিন অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ছিল। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে পূর্বনির্ধারিত সেমিস্টার ও ইয়ার পরীক্ষা বাতিল রেখেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েকটি বিভাগ অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস চললেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম ছিল। এরই মাঝে নভেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে মাউশির। শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে চলতি মাসে এ ধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা যায়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকেন। ক্যাম্পাসের বাসই তাদের যাতায়াতের একমাত্র বাহন। নিরাপত্তার কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দূরের বাস বন্ধ রেখেছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা। দূরের সহপাঠীদের কথা চিন্তা করে অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীও ক্লাস বন্ধ রেখেছেন। তবে কোনো কোনো বিভাগ অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে। জবি, ঢাবি, ইবি, রাবি, চবি, জাবিসহ দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া বন্ধ ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা। অফিসিয়ালি নোটিস দিয়ে তারা পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে।
গাজীপুর থেকে এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস করেন মাস্টার্স শিক্ষার্থী মমতাজ পারভীন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, অবরোধে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হামলা হয়েছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটির বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছেন। এর আগেও হরতাল-অবরোধে বিভিন্ন বাসে হামলা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে চান না বলেও জানান এই শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ বলেন, আমাদের সব শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনের ব্যবস্থা নেই। অনেক শিক্ষার্থী নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর থেকে এসেও ক্লাস করেন। নির্বাচন-পূর্ব হরতাল-অবরোধে সবার মাঝেই আতঙ্ক থাকে। অধিকাংশের বাবা-মা সন্তানদের এ ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে পাঠাতে চান না। সেজন্য আমরা সম্মিলিতভাবে ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
হরতাল-অবরোধে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে অভিভাবকরাও আতঙ্কে থাকেন। যদিও চলতি নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে সব স্কুলের পরীক্ষা শেষ করার ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান বলেন, হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠান না। স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও কম। প্রভাতি শাখার ৫০-৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও দিবা শাখায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ উপস্থিত থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব কী না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাউশি আমাদের যে নির্দেশনা দেবে, আমরা সেটা পালন করব।
তবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিবেচনার কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সাধারণত ডিসেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার বা ইয়ার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নভেম্বরেই পরীক্ষা শেষ করতে চাচ্ছে। সমাবেশ, হরতাল, অবরোধ এগুলো রাজনীতিতে থাকবেই। তবে এ শব্দগুলো এখন আতঙ্কিত করছে আমাদের সন্তানদের। অন্তত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে এ মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকা উচিত।