1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ

অনলাইন প্রতারণা বেড়েই চলছে

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৫৮ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক,

ঋণের ফাঁদ পেতে অনলাইনে মানুষকে প্রতারিত করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা থামছে না, বরং বেড়েই চলছে দিনকে দিন। দ্রুত ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের কথা বলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে শিকারের লক্ষ্য বানিয়েছে প্রতারকরা। এ উদ্দেশ্যে তারা বিশ্বব্যাংকের নাম ও লোগো ব্যবহার করে ফেসবুক পেজ খুলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলছে মানুষকে। আর এই ফাঁদে পা দিয়ে ইতোমধ্যেই মোটা অঙ্কের অর্থ খুইয়ে বসে আছেন অনেকেই। উদাহরণ হিসেবে ‘ডব্লিউবি বিডি সার্ভিস’ নামের একটি ফেসবুক পেজের কথা বলা যাক।

পেজটি বিজ্ঞাপন দিচ্ছে: ‘ব্যবসা শুরু করার জন্য বা ব্যক্তিগত কারণে আপনার কি ঋণের প্রয়োজন? বিশ্বব্যাংক নিয়ে এলো দ্রুত, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ লোন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটাতে আমাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা।’ এদিকে ‘জিনি এ’ নামের আরেকটি ফেসবুক পেজেও একই ধরনের বিজ্ঞাপন দেখা যায়।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব পেজের ‘সাইন আপ’ বা ‘অ্যাপ্লাই’ বাটনে ক্লিক করলেই একটি অ্যাপ ডাউনলোড করার নির্দেশনা দেয়া হয়। অনলাইনে একটা ফরম পূরণ করার পর আগ্রহী ঋণগ্রহীতাকে দেয়া হয় একটি হোয়াটসঅ্যাপ লিঙ্ক। ওই লিঙ্কে ক্লিক করলেই চলে যায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের চ্যাট বক্সে। এই চ্যাট বক্সে প্রবেশ করার পর ভুক্তভোগীদের নিবন্ধন ফি, প্রসেসিং চার্জ এবং সরকারি করের মতো নানা ছুতোয় ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। বিকাশের মাধ্যমে এই অর্থপ্রদান সম্পন্ন করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঋণ অনুমোদনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ডব্লিউবি সার্ভিসেস নামের পেজটির ফাঁদে পড়ে গাজীপুরের পোশাক শ্রমিক আলমগীর হোসেন খুইয়েছেন সাড়ে ৭ হাজার টাকা।

গল্প ভিন্ন হলেও টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল ছিল প্রায় একই। তার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর। রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৫ হাজার ও ট্রান্সফার ফি বাবদ আড়াই হাজার টাকা বিকাশে নেয়ার পর তার কাছে আরও টাকা চাইলে সন্দেহ হয় আলমগীরের। পরে তিনি তার দেয়া টাকা ফেরত চাইলে ব্লক করা হয় তাকে।

আলমগীর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের নাম ও লোগো দেখে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। তাই টাকা পাঠাতে দ্বিধা বোধ করিনি। যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়েছিলাম, সেই নম্বরে কল দিয়ে দেখি নম্বর বন্ধ। বুঝতে পারি, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার মতো অনেকেই এসব পেজের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।’

এ ধরনের প্রতারণামূলক সব পেজ অবশ্য বিশ্বব্যাংকের নাম ও লোগো ব্যবহার করে না। অনুসন্ধানে অন্তত ১৫টি পেজের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা এভাবে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়ার লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এ রকম কয়েকটি পেজ হচ্ছে: ফিউচার লেন্ডিং, বোরো বক্স, বোরো বক্স ০০২, গ্রো ট্রাস্ট, বেস্ট কার্ডস ইন বাংলাদেশ, মানি লায়ন, সিআইবিএম লোন অব বাংলাদেশ, বিগ ভুয়া এএ, জেফরি রস, জিনি এ, ম্লাদিলিকোভা২, ডব্লিউবি বিডি সার্ভিসেস এবং এএসডি। এরমধ্যে ‘সিআইবিএম লোন বাংলাদেশ অব অনলাইন’ পেজটি শুধু নারী উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে দিয়েছে বিশেষ সুবিধা। প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেছেন যে পেজগুলোর নাম আলাদা হলেও, প্রতারণার কৌশল এবং চিহ্নগুলো মূলত একইরকম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণ দেয়ার আড়ালে মুনাফা করার মধ্যেই এই প্রতারকরা তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখে না। অ্যাপের মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের মোবাইল ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য বের করে ব্ল্যাকমেইল করে।

‘অনুমোদিত কোনো অনলাইন ঋণদাতা নেই’: বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেসবাউল হক বলেন, অনলাইনে ঋণ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়নি। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া বা আর্থিক লেনদেন করার আগে ওই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমোদিত কি না, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নেয়ার জন্য গ্রাহকদের অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনই ঝুঁকিপূর্ণ।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কেউ কোনো ধরনের প্রতারণা বা অনিয়ম করলে তা তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি উইং কাজ করে। এসব বিষয় তাদের অবগত করলে তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়।’

প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকার উপায়: বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীদের প্রথমে বুঝতে হবে অনলাইনে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল আইডি দিয়ে কোনো জামানত ছাড়া ঋণ দেয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। আর কোনো গ্রাহকের আয়-ব্যয়ের হিসাব, ঋণের টাকা ফেরত দেয়ার সক্ষমতা যাচাই-বাছাই না করে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ দেয়াটাও বাস্তবসম্মত নয়।

তিনি বলেন, ‘ব্যবহারকারীদের বুঝতে হবে, অনলাইনে সহজ শর্তে, কম সুদে মাত্র কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণ অনুমোদন দেয়ার বিজ্ঞাপনদাতারা সব প্রতারক। কারণ এদের বাস্তবে কোনো অফিস নেই বা তারা গ্রাহকদের সাথে সরাসরি দেখা করতে চায় না। এদের ওয়েবসাইটের ইউআরএল খেয়াল করলে দেখা যাবে ‘এইচটিটিপি’র পরে ‘এস’ অক্ষরটি থাকে না। তার মানে তাদের ওয়েবসাইট সুরক্ষিত নয়।’

শিশির আরও বলেন, কোনো পেজ থেকে যদি কোনো লিংকে ক্লিক করতে বা অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে, ধরে নিতে হবে তারা প্রতারক। এসব পেজের ‘সাইন আপ’ বা ‘অ্যাপ্লাই’ বাটনে ক্লিক করা থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিরত থাকার পরামর্শ দেন এই ফ্যাক্টচেকার।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com