শফিকুল ইসলাম সোহাগ’রাজধানীর বনানী মডেল টাউনের ই ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ৭৫ নম্বর বাড়ি ‘রজনীগন্ধা’। বাড়িটি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়। মাত্র সাত মাস আগেও নিয়মিত এখানে বসেই দলের কর্মকা- পরিচালনা করতেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে এই কার্যালয়ে আর আসা হয় না এরশাদের। তবে ৫ জুন ঈদের দিন ছিল একটু ব্যতিক্রম। বেলা ১১টায় জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ি করে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসলেন এক সময়ের প্রতাপশালী রাষ্ট্রনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে নয়, গাড়ি থেকে নেমে হুইল চেয়ারে করে তিনি প্রবেশ করেন রজনীগন্ধার ড্রয়িং রুমে। গাড়ি থেকে মাত্র কয়েকগজের দূরত্ব রজনীগন্ধার ড্রয়িং রুম। এই কয়েকগজ রাস্তা হেঁটে পাড়ি দেওয়ার মতো অবস্থা নেই এরশাদের। তাই দীর্ঘ দিনের কর্মচারী আব্দুস সাত্তার হুইল চেয়ারে করেই এরশাদকে রজনীগন্ধার ড্রয়িং রুমে আনার পর পরই দলের নেতারা সবাই ধরাধরি করে নির্ধারিত চেয়ারে এরশাদকে বসান। এভাবে গত কয়েক মাস ধরে হুইল চেয়ারে চলাচল করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। গত সাত মাস ধরে অসুস্থ তিনি। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। হুইল চেয়ারই তার একমাত্র চলাফেরার সারথি। অনেক সময় দু-একজন ধরে হুইল চেয়ার থেকে নামাতে হয়, উঠাতে হয়। বেশিরভাগ সময় কাটে বিছানায়। অনেক সময় দীর্ঘ দিনের পরিচিত মানুষকেও চিনতে কষ্ট হয়। শুধু তাই নয় বছরের প্রতাপশালী রাষ্ট্রনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন অনেকটা নিঃসঙ্গ। পরিজন বলতে পাশে থাকার মতো কেউই নেই। পরিচর্চা করেন স্টাফরা। অধিকাংশ সময় কাটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। দলের নেতা-কর্মীরা এখন আর ভিড় করেন না বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে। দলের কোনো কর্মসূচিতে তিনি আর অংশ নেন না। নব্বই বছরের শরীর আর সায় দেয় না। সাবেক এই সেনাপ্রধান এরশাদের দীর্ঘদিনের কর্মচারী আব্দুল ওহাব, আব্দুস সাত্তার, বাদশা, নিপা ও রুবির তত্ত্বাবধানে কাটছে তার দিনকাল। ছোট ভাই জিএম কাদের নিয়মিত বড় ভাই এরশাদের খোঁজখবর রাখেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের প্রায় সারা দিনই বাসায় কাটে। শরীরটা খারাপ বোধ করলে ডাক্তারের কাছে যান। শারীরিক পরিচর্চা কারা করেন জানতে চাইলে বলেন, কাজের লোক আছে। তারাই পরিচর্চা করেন। আমরা প্রায়ই দেখা করতে যাই। স্ত্রীসহ নিকটাত্মীয় কেউই এইচ এম এরশাদের সঙ্গে থাকেন না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। মনোনয়নপত্র জমাদানের পরপরই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তবে তখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না। সিঙ্গাপুর থেকে এসেই পুনরায় তিনি ঢাকার সিএমএইচএ ভর্তি হন। নির্বাচনের পর তিনি আবারও সিঙ্গাপুর গিয়ে চিকিৎসা নেন। ঈদের দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ শুভেচ্ছা বিনিময়ের ফাঁকে এরশাদ কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। এই সময় এরশাদ বলেন, এক জীবনে অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, গণমানুষের ভালোবাসায় আমার জীবন ধন্য। এরশাদ বলেন, ঈদের এ আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে বারবার ফিরে আসুক। তবে আগামী ঈদ আমার জীবনে ফিরে নাও আসতে পারে। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে আবারো হুইল চেয়ারে করে ড্রয়িং রুম থেকে নিজের গাড়িতে গিয়ে উঠেন এরশাদ। এই সময় কর্মচারী আব্দুস সাত্তারের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, আলমগীর শিকদার লোটন, দলের কেন্দ্রীয় নেতা সুজন দেসহ দলের অন্য নেতারা হুইল চেয়ারে বসা দলের অভিভাবকের পেছনে পেছনে গিয়ে জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িতে তুলে দিয়ে বিদায় জানান। স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। টানা নয় বছর দেশ পরিচালনা করেছেন শক্ত হাতে। এই নয় বছরের প্রায় পুরোটা সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সিপিবিসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল তাকে স্বৈরাচার আখ্যায়িত করে রাজপথে তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন করেছে। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেও তিনি দেশের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।