আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে (সম্মেলন) দলের কার্যনির্বাহী সংসদে অর্ধেকের বেশি পদে পরিবর্তন ও রদবদলের আভাস পাওয়া গেছে। মোট ৮১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে সভাপতি পদটি অপরিবর্তিত থাকবে। অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব আসতে পারে সাধারণ সম্পাদক পদে। সভাপতিম-লীর ১৭টি পদ, সম্পাদকম-লীর ৩৪টি পদ, কোষাধ্যক্ষের ১টি পদ এবং ২৮টি সদস্য পদ; মোট ৮০টি পদের মধ্যে ৪০টির বেশি পদে নতুন মুখ আসতে পারে; বাড়তে পারে নারী প্রতিনিধিত্ব। আওয়ামী লীগের নির্ভারযোগ্য একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে কাউন্সিল যতই এগিয়ে আসছে, নিজ নিজ পদ ধরে রাখতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের তৎপরতা ততই বাড়ছে।
এবারের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে নতুন মুখের প্রাধান্য বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা সংবাদকে বলেন, সম্প্রতি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোতে নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। নেতৃত্ব পরিবর্ততের মধ্য দিয়ে বর্তমানে যে শুদ্ধি অভিযান চলছে, মূল দলের সম্মেলনেও এর প্রভাব পড়বে। এছাড়া আগামী দিনে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে নতুনদের জায়গা করে দেয়ার সংস্কৃতি বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন এবং পরবর্তিতে মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। একাদশ সংসদে সরাসরি ও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে প্রায় ৯০ জন এবং ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভায়ও ৩২ জন নতুন মুখ এসেছেন। এবারের কাউন্সিলেও নতুনদের জায়গা করে দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আসন্ন কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যাপক পরির্বনের আভাস দিয়েছেন। গত ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার দলের দফতর উপকমিটির সভায় তিনি বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শুধু একটি পদে কোন পরিবর্তন হবে না। সেই পদটি হলো সভাপতির পদ। পদটিতে শুধু একজনই থাকবেন, তিনি শেখ হাসিনা। এছাড়া বাকি সব পদে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর এসব নির্ভর করবে দলীয় সভাপতির ওপর।
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’- শীর্ষক স্লোগানে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ত্রি-বার্ষিক এ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে নিয়মিত কাজ করছে ১১টি উপকমিটি। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ প্রায় ৬০ হাজার নেতাকর্মী অংশ নিতে পারেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলায় চলমান সম্মেলন আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশপাশি রাজনীতি সচেতন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের প্রত্যাশা, এবার ২১তম সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদকসহ উল্লেখযোগ্য অন্যান্য পদে পরিবর্তন আসবে। তবে ক্ষমতাসীনদের কাউন্সিলের চলমান সংস্কৃতি অনুযায়ী দলীয় সভাপতির পছন্দের ব্যক্তিকেই সবাই সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের কাছের নেতাদের ধারণা, এ পদে ওবায়দুল কাদের বহাল থাকবেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ মনে করছেন, এই পদে নতুন মুখ হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় থাকা সভাপতিম-লীর একজন সদস্য এবং একজন সাংগঠনিক সম্পাদকও এবার চমক হিসেবে আসতে পারেন।
ফয়েজ আহমেদ তুষা র ;সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া ১৭ সদস্যের সভাপতিম-লীতে বর্তমানে তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে। সাংগঠনিক কর্মকা-ে অপেক্ষাকৃত নিস্ক্রিয়তা এবং বিতর্কিত ভূমিকার কারণে সভাপতিম-লী থেকে এবার ৬ জন বাদ পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে নতুন মুখ আসতে পারে নয় জন। চার জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে এবার দুইজন বাদ পড়তে পারেন, যেখানে ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে দুই জনের পদোন্নতি হতে পারে।
এছাড়া সাংগঠনিক পদে কয়েকজন নতুন মুখ আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক অন্যান্য পদগুলোর মধ্যে সাত-আটটি পদে নতুন মুখ আসতে পারে। সদস্য পদে এক ডজনের বেশি নতুন মুখ আসতে পারে। যেখানে স্থান করে নিতে পারেন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম বিভিন্ন সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতারা।
নির্বাচন কমিশনের আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুসারে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটি পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব ২০২০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে আরপিও অনুযায়ী ২৭ জন নারী প্রতিনিধি থাকার কথা। তবে বর্তমান কমিটিতে নারী নেত্রী আছেন ১৫ জন। এবারের সম্মেলনে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা দলটির রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য সংবাদকে বলেন, কার্যনির্বাহী সংসদে ব্যাপক পরিবর্তন হবে এটা নিশ্চিত। বেশ কয়েকজন নেতা পদোন্নতির জন্য চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ নেতাই নিজ নিজ পদ বহাল রাখতেই বেশি তৎপর।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের কাউন্সিলে একটি পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব উপহার দিতে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবেন। যেখানে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, দুর্নীতি, অনিয়ম করে বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিকদের জায়গা হবে না।