চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে আইনজীবীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শুধুমাত্র আপিল বিভাগের তালিকাভুক্তদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। তবে সরকারি আইন কর্মকতাদের ক্ষেত্রে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, উভয়পক্ষের ৩০ জন করে আইনজীবী আদালতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বাকিদের বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শুরুতে প্রবেশে কড়াকড়ি করায় প্রবেশ ফটকের বাইরে হট্টগোল হয়। পরে অনেকেই প্রবেশ করতে না পেরে জবাবদিহিতা চান প্রশাসনের কাছে। শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনাকরীরা শুধু প্রবেশ করতে পারবে।
জানা গেছে, রাষ্টপক্ষের আইনজীবীদের অনেকের আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনার অনুমতি না থাকার পরও আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে আপত্তি জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। পরে প্রধান বিচারপতিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ২০/৩০ জন করে নির্ধারণ করে দেন। এরপরই প্রধান বিচারপতি ৩০ জন করে নির্ধারণ করে দেন।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান জানান, সরকারি আইন কর্মকর্তাদের সব আদালতে প্রবেশে সুযোগ রয়েছে। এ কারণে তাদের বাধা দেয়া হয়নি।
সকাল আটটা ২০ মিনিটে আইনজীবীরা আদালত কক্ষে প্রবেশ করা শুরু করে। এই জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির এজলাসে বসানো হয়েছে আটটি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের উপর শুনানি শুরু হয়েছে। আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকার ১২ নম্বর ক্রমিকে জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এদিকে, আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ মেডিক্যাল রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় রিপোর্ট আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি জানান, খালেদা জিয়া আথ্রাইটিস রোগে ভুগছেন। নতুন কোন রোগে উনি আক্রান্ত হননি। তার শারীরিক অবস্থা আগের মতই আছে।
গত ৫ ডিসেম্বর চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিন ধার্যকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির এজলাসে বিক্ষোভ ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শুনানির দিন এগোনো এবং ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এমন শ্লোগানে বিক্ষোভ করেন। এজলাস কক্ষে বিক্ষোভের ঘটনাকে ওই সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেন, আপনারা (বিএনপিন্থী আইনজীবী) কি আদালতের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। ওই হট্টগোল ও বিক্ষোভের ঘটনায় সরকার ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করেন। সেই প্রেক্ষাপটে আজ জামিন শুনানিকে ঘিরে সরকার ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা নিজেদের অবস্থানকে জানান দিতেই আপিল বিভাগে জমায়েত হবেন। নিজ নিজ সংগঠনের আইনজীবীরা তাদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে এই জমায়েতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গল ও বুধবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।