1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

হুন্ডিতে বিপুল লেনদেন ॥ ইমো ও বিগো লাইভে ভয়ঙ্কর প্রতারণা

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১
  • ২৩৮ বার দেখা হয়েছে

রহিম শেখ ॥ রুবেল হোসেন (ছদ্মনাম)। জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। সেখানে প্রতিদিন সকাল ছয়টায় বাসা থেকে বের হন। ঘরে ফেরেন রাত ১০টার কিছু পরে। সপ্তাহে সাতদিনই কাজ করেন। প্রতিদিন রুবেল যখন ঘরে ফেরেন তখন বাংলাদেশের ঘড়ির কাঁটা ১টা ছাড়িয়ে যায়। তাই পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে পারেন না তিনি। কিন্তু গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলে কী হবে, বাংলায় কথা বলার জন্য রুবেল ঠিকই একটি মাধ্যম খুঁজে বের করেছেন। বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছেন বিগো লাইভ নামে একটি এ্যাপস আছে যেখানে সারারাত ধরে টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়। বন্ধুর কাছ থেকে এমন তথ্য জানার পর ‘বিগো লাইভ’ ইনস্টল করে ব্যবহার করতে শুরু করেন তিনি। কয়েক দিনের মধ্যে আলাপ হয় ববির (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি ঢাকায় থাকেন বলে পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে প্রথমে ‘ইমো’ নম্বর নিয়ে সেখানে কয়েকদিন ভিডিও চ্যাট করেন। এক সময়ে নিজেদের মধ্যে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন তারা। তবে এগুলোই যে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারেননি রুবেল। কিছুদিন পর ববি তাকে বø্যাকমেল শুরু করেন। প্রথমে ৫০ হাজার দাবি করে বলেন, না দিলে ওই নগ্ন ভিডিও তিনি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন। বাধ্য হয়ে রুবেল তাকে ৩০ হাজার টাকা দেয়ার মাসখানেক পর আবার তার কাছে দাবি করা হয় ১ লাখ টাকা। বাধ্য হয়ে এবারও তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দেন ববিকে। রুবেল এসব অর্থ লেনদেন করেন হুন্ডিতে। নোয়াখালীর বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী আরমানের সঙ্গেও ঘটেছে একই ধরনের ঘটনা। জানান, তার মতো অনেকেই এই প্রতারণার জালে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। রুবেল কিংবা আরমানের মতো প্রতারণার শিকার এমন প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা হাজার হাজার। অনেকেই আবার বন্ধুত্ব করতে ডিজিটাল কারেন্সি ‘ডায়মন্ড’ কিনছেন। এতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে হুন্ডিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইন্টারনেট কোম্পানি বিগো টেকনোলজি ২০১৬ সালে বিগো লাইভ চালু করে থাইল্যান্ডে। বর্তমানে ‘বিগো লাইভ’ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। থাইল্যান্ডে বর্তমানে ‘এ্যাপল স্টোর’ ও ‘গুগল প্লে স্টোরে’ এই এ্যাপসটি র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে। থাইল্যান্ডে ভার্চুয়ালি যৌনতার বিস্তারে এই এ্যাপটি ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। থাইল্যান্ডের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয় ‘বিগো লাইভ’। বর্তমানে বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী এই এ্যাপে সময় কাটাচ্ছে। দেশের জন্য নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের হুমকিস্বরূপ এবং যুব সমাজের ওপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এই বিবেচনায় ২০২০ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিগো লাইভ এ্যাপটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যদিও এ্যাপটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যে কোন ধরনের পর্নোগ্রাফি ও নগ্নতা বিগো লাইভে নিষিদ্ধ। এসব কর্মকাÐ ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট আইডি ব্যান হতে পারে। তাই এই এ্যাপে সরাসরি যৌন কার্যক্রম চলে না। এটি ব্যবহার করে মূলত যৌনতার ফাঁদ তৈরি করা হয়। অর্থাৎ বিগো লাইভ যৌন ব্যবসার একটি প্লাটফরম হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত বিগো লাইভের বেশির ভাগ আইডি ফলো করে দেখা গেছে, রাত বাড়লেই অশ্লীল কার্যকলাপে মেতে উঠছে এসব ব্যবহারকারী। তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শত শত তরুণ-তরুণী। সোমবার রাত দেড়টা। রুমে আলো-আঁধারি পরিবেশ। গানের তালে শরীর প্রদর্শন করছেন স্বল্পবসনা তরুণী। মুখে কড়া মেকআপ। একটু পরপর ঘোষণা আসছে তার কণ্ঠে। বিকাশে হাজার টাকা দিলেই নগ্নদেহ দেখতে পাবে। দর্শকদের আহŸান জানাচ্ছে, দ্রæত বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর জন্য। ঘোষণার মধ্যেই একটু পরপর পর্দার আড়ালে চলে যায় তরুণী। বিদেশে এমন ঘটনা হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। তবে তা শুধুই ভার্চুয়াল জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিগো লাইভ নামে একটি মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে দেহ প্রদর্শন করছে বাংলাদেশের তরুণীরা। যার মাধ্যমে ফোন সেক্সে প্রবাসী যুবকদের আকৃষ্ট করছে তারা। টাকার বিনিময়ে ইমো, হোয়াটস এ্যাপ কিংবা ভাইবারে হচ্ছে এই ফোন সেক্স। বিগো লাইভের মাধ্যমে এই যৌন ব্যবসার মূল টার্গেট প্রবাসীরা। জানতে চাইলে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, টিকটক ও লাইকি সিঙ্গাপুরের ব্যক্তিমালিকানা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এ্যাপগুলো হয়তো বন্ধ করা হবে না। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্নোগ্রাফি রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ চায় সরকার। টিকটক, লাইকি ও বিগো লাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের চেষ্টা চলছে। করোনার কারণে দেরি হচ্ছে। হয়তো পরিস্থিতি বিবেচনায় ভার্চুয়ালিও বৈঠক হতে পারে। এসব করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটায় সবকিছু এখন হাতের মুঠোয়। সহজলভ্য হচ্ছে অনেক কিছু। এর যেমন সুবিধা আছে, অসুবিধাও আছে অনেক। টিকটক, লাইকি কিংবা বিগো লাইভ এর উদাহরণ। অসুবিধার কারণে অনলাইন এসব প্ল্যাটফর্ম ঢালাও বন্ধ করা কোন সমাধান নয়। অপরাধ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়াই এখন বড় প্রয়োজন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাশফুল, আইরীন চৌধুরী, সাইলেন্ট কুইন, নিমপাতা, সালমা শেখ, তানিশা, কিটকেট লিমা, মায়াবি সুন্দরী, পাখি, রুবা ইসলাম, এঞ্জেল তমা, মোনালি, জেসমিন পুনম, বেবি, ফারিহা, সুন্দরী রুমী, মেঘ বালিকা, অর্পিতা, ফ্রি কুইন, নীল সায়লা, অর্থি খান, শ্যামা চৌধুরী, কুমকুম, নিঝুম রাতের সুমি, রূপা, পুষ্প, জিনিয়া খান মিম, সোনালি কারিনা, হট গার্ল, মৌসুমি চৌধুরী এমন নামে বেনামে আইডি খুলে বিগো লাইভের মাধ্যমে অশ্লীল কর্মকাÐ পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি আইডিতে নারী বেশে প্রবাসীদের মনোরঞ্জন করছেন বাংলাদেশের হিজড়ারা। যাদের মূল টার্গেট প্রবাসে থাকা বাংলাদেশী যুবকরা। বিগো লাইভে যারা নিজেকে প্রদর্শন করে তাদের বলা হয় ব্রডকাস্টার। লাইভ রুমে যারা দর্শক থাকে তাদের গেস্ট বলে। গ্রæপ করেও অনেক সময় একাধিক ব্যবহারকারী ব্রডকাস্ট করে থাকে। ব্রডাকাস্টাররা ইচ্ছেমতো গেস্টদের লাইভে সংযুক্ত করতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে সোমবার রাত দুইটার দিকে বিগো লাইভে ব্রডকাস্টার ছিল সুন্দরী রুমি নামে এক হিজড়া। ওই সময় তার দর্শক ছিল ৮৯৩ জন। হিন্দি গানের তালে তালে শরীর দোলাতে থাকে রুমি। দর্শকরা একের পর এক অনুরোধ করতে থাকে তার কাপড় খুলতে। কিন্তু সুমি সেই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে তার ইনবক্সে ইমো নাম্বার দিতে আহŸান জানায়। একপর্যায়ে যুবায়ের নামে এক যুবক নগ্ন হওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা অফার করে। কিন্তু সুমি জানায় বিগোতে নগ্ন হলে আইডি ব্যান হতে পারে। তাই ওই যুবককে ইনবক্সে যেতে বলে। একই সময়ে বিগো লাইভে ব্রডকাস্টার ছিল অর্পিতা। তার চেহারা না দেখা গেলেও কণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল। লাইভ শেয়ার দাও, ইনবক্সে ইমো নম্বর দাও- বলে চিৎকার করছিল সে। চেহারা আড়াল করে ব্রডকাস্টে পাওয়া যায় রূপা নামে এক ব্রডকাস্টারকে। লাইভে সে জানায় তার বয়স ২১, বাসা ঢাকায়। তার সঙ্গে যারা ফোন সেক্স করতে আগ্রহী তাদেরকে ইমো নম্বর ইনবক্স করতে বলে সে। এজন্য নিজের ফোন নম্বর লাইভে ব্রডকাস্ট করে সে। রূপা লাইভে জানায়, যারা ভাল মানুষ তারা যেন বিগোতে না আসে। তার বক্তব্য, ভাল হওয়াটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। এখন সমস্যায় পড়লে কেউ কাউকে সাহায্য করে না। এমনিতেই টাকা দিয়ে কেউ সাহায্য করবে না। তাই সে এই পথে টাকা উপার্জন করছে। রূপা আরও জানায়, তার পরিচয় সে একজন পতিতা। এটাই তার পেশা। এ সময় আলম খান নামে একজন কুয়েত প্রবাসী লাইভে যুক্ত হয়। সে রূপাকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করতে চায়। কিন্তু রূপা এই সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি আলম খান তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে জানায়, কোনদিন সে বিয়ে করবে না। এভাবে দেহ ব্যবসার মাধ্যমে নিজের উপার্জন করা অর্থে সংসার চালাতে চায় সে। পুষ্প নামে আরেক ব্রডকাস্টার নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে ব্রডকাস্ট করছিল। তার দাবি, বিগো লাইভে অনেক পুরুষ মেয়ে সেজে ব্যবসা করছে। তারা প্রতারক। নিজেকে আসল দাবি করে পুষ্প আরও বলে, যারা প্রতারণা করে তারা বিগো লাইভে নিয়মিত থাকে না। তাই সবাই যেন সতর্কতার সঙ্গে ফোন সেক্সের জন্য টাকা পাঠায়। হট গার্ল আইডি নিয়ে ব্রডকাস্টে ছিল এক হিজড়া। সে জানায়, তার বাসা ঢাকার লালবাগে। এক হাজার টাকা কেউ বিকাশ করলে লাইভ ছেড়ে সে তার সঙ্গে ফোন সেক্স করবে। বিগো লাইভে সবাই টাকা উপার্জন করে না। টাকা ছাড়াই অন্যদের মনোরঞ্জন করে সাভারের রাজাসনের জেসমিন পুনম।

পুনম জানায়, সে পেশায় একজন নর্তকি। বিভিন্ন পার্টি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সে নাচে। কিন্তু করোনার কারণে সেই প্রোগ্রামগুলো এখন বন্ধ। বিগো লাইভে তরুণদের বিনোদন দিচ্ছিল বেবি নামে আরেক তরুণী। সে জানায় তার বাসা মিরপুরে। লাইভে সে তরুণদের যুক্ত করে নানান রসালো আলাপ করছিল। তার সঙ্গে লাইভে আসার জন্য একের পর তরুণ লাইনে ছিল। তেমনি একজন সৌদি আরব প্রবাসী রঞ্জু মৃধা। রঞ্জুকে লাইভে যুক্ত করে নানান রকম অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করছিল বেবি। এক পর্যায়ে রঞ্জুকে ইনবক্সে ইমো নাম্বার দেয় বেবি। তবে শুধুমাত্র প্রবাসীরাই নন। এই এ্যাপসের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন দেশের অনেক তরুণ-তরুণী। সোবাহান নামের এক তরুণও জানিয়েছেন একইভাবে প্রতারিত হওয়ার গল্প। তবে বিষয়টি ‘লজ্জা’র হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অন্য কারও সহায়তা নিতে যাননি তিনি। এ্যাপসটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, এটি ব্যবহার করে একই সঙ্গে টেক্সট ও ভিডিও চ্যাট করা যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একটি বোর্ডে (ভিডিও চ্যাটে) যুক্ত হতে পারেন আটজন পর্যন্ত। তারা একই সঙ্গে নিজেদের দেখতে ও শুনতে পারেন। এছাড়া তাদের চ্যাটিং (ভিডিও) দেখতে পারেন এ্যাকাউন্টধারী যে কেউ।

এ্যাপসটি মূলত কারা ব্যবহার করেন এমন বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, মূলত উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী, প্রবাসী, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে একাকিত্ব অনুভব করা এবং যে সমস্ত নারী বাড়িতে একা অবস্থান করেন তাদের মধ্যেই এ্যাপসটি ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অশ্লীল গল্প, ছবি, ভিডিও স্ট্রিমিং লাইভ চ্যাট, ফিশিং বা পিকে গেম খেলেন ব্যবহারকারীরা। বিগো লাইভ এ্যাপে দুধরনের আইডি রয়েছে। একটি ব্রডকাস্টার আইডি ও অপরটি সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করে। এছাড়াও সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করতো, বিনিময়ে তাদের ডিজিটাল কয়েনসদৃশ ডায়মন্ড গিফট করা হতো। পরবর্তীতে এই ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত। তাদের টার্গেট মূলত দেশের যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে এ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য ডায়মন্ড নামে একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় ব্যবহারকারীদের। সাধারণত বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই ডায়মন্ড কেনা যায়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা। যে যত বেশি ডায়মন্ড উপহার পান, লাইভে তিনি ততবেশি অশ্লীলতা করেন।

এসব এ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল কারেন্সি ডায়মন্ড ক্রয় করছে। বাংলাদেশী এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশী এডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিগো লাইভ এ্যাপে ব্যবহারকারী পরিচয়ে কথা হয় অর্ণব এজেন্সির হোস্টেং প্রধান অর্নব আরেফিনের সঙ্গে। অর্ণব জানান, তার গ্রæপের সদস্য হলে লাইভ ব্রডকাস্টে প্রচুর দর্শক থাকবে। এর মধ্যে অনেকেই বিনস ও ডায়মন্ড গিফট করবে। তবে তার আগে ৩৮১৮টি ডায়মন্ড তাকেই গিফট করার কথা জানান অর্ণব। তিনি বলেন, বিগোতে জনপ্রিয়তা পেতে হলে বিনস ও ডায়মন্ড গিফট করতে হয়। না হলে জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে না। লাইভে আসলে কেউ কথা বলতে চাইবে না। কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে অর্ণব জানান, ৭ হাজার ৭৫৫ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। তবে বিগো এ্যাপে গিয়ে দেখা যায়, বিগোর মাধ্যমে সরাসরি ডায়মন্ড কিনতে হয় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। কিন্তু যে কেউ চাইলে এডমিন কিংবা হোস্টদের কাছ থেকেও এই ডায়মন্ড কিনতে পারে। এতে পুরো অর্থই লেনদেন হয় হুন্ডির মাধ্যমে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ডায়মন্ড বেচাকেনা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। বাহরাইন প্রবাসী মুরাদ জনকণ্ঠকে বলেন, অবসর সময় কাটানোর জন্য এক বন্ধুর মাধ্যমে এই এ্যাপের খোঁজ পান। এরপর বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেন। এ পর্যন্ত তিনি ৪০ হাজারের বেশি ডায়মন্ড বিভিন্ন মেয়েকে গিফট করেছেন জানান। এতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হলেও সামান্য পরিমাণে ডায়মন্ড তিনি গিফট পেয়েছেন। জানালেন, বাহরাইনে বসেই হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন করেছেন। সৌদি আরব প্রবাসী রিয়াজুল জানান, বাংলাদেশী হোস্ট জয় ফ্যামিলি এজেন্সি থেকে এ পর্যন্ত তিনি দেড় লাখ টাকার বিন্স ও ডায়মন্ড কিনেছেন। পুরো অর্থই দেশে পাঠিয়েছেন হুন্ডিতে। রিয়াজুল জনকণ্ঠকে জানান, ক্রেডিট কার্ড না থাকার কারণে সরাসরি বিগো কোম্পানি থেকে ডায়মন্ড কিনতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে হুন্ডিতে লেনদেন করেছেন। তিনি জানান, তার মতো সবাই এই ডায়মন্ড কিনতে হুন্ডিতে লেনদেন করেন। জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা বলেন, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এ্যাপ, গ্রæপ বা ওয়েব বন্ধ করা বা নিষিদ্ধ করা কোন সমাধান নয়। একটা বন্ধ করলে বিকল্প আরও অনেক পথ খুলে যাবে। তাই প্রতিরোধে জোর দিতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।’ সম্প্রতি লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং এ্যাপ ‘লাইকি’ ও ‘বিগো লাইভ’-এর ডিজিটাল কয়েনসদৃশ ‘ডায়মন্ড’ বিক্রির মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতি মাসে শতকোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে এক বিদেশী নাগরিকও রয়েছেন। অন্যরা হলেন- মোস্তফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এসএম নাজমুল হক, আসমা উল হুসনা সেজুতী। গত শনি ও রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, প্রাইভেটকার, ক্রেডিট কার্ড, চেক বই ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, ‘ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এজেন্সি। এরকম একাধিক এজেন্ট বাংলাদেশে রয়েছে। এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ প্রদান করে ডায়মন্ড কেনেন।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশী লক্ষাধিক এ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছেন। বাংলাদেশী এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশী এডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অশ্লীলতা বা দেশীয় কালচারবিরোধী চেষ্টা দমনে বা নিয়ন্ত্রণে যা যা করণীয় সেগুলো আমরা করছি। মূল বিষয় হচ্ছে, ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শও দেয়া হয়েছে। এর আলোকে তারা করণীয় কী হতে পারে তা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়কে অবগত করবে। এরপর আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেব।’

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com