প্রবাসী শ্রমিকদের হাতের নাগালে বিমান ভাড়া রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) আট ব্যক্তির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

রিটকারীরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাটের মো. মেহিদী হাসান, হুমায়ুন কবীর সোহেল, জাবেদ আহমাদ, সাইফুর রহমান চৌধুরী, আহমেদ আদনান চৌধুরী, হাসান মাহমুদ আলবাব, সিব্বির আহমেদ ও মো. মাহমুদুর রহমান।

নোটিশে সঙ্গে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অস্বাভাবিক বিমানভাড়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কেন যথার্থ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতিকে বিবাদী করা হয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশ হাতে পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সেটি জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা নোটিশে বলা হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

নোটিশে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এই আয় ২০১৯-২০ অর্থ বছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। গত এক বছরে প্রবাসীরা যে পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, তা দিয়ে দেশে সাতটি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব।

এতে বলা হয়, প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। প্রবাসীদের কল্যাণ ও সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু আইন প্রণয়ন করেছে এবং নীতিমালা গ্রহণ করেছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৬, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি, ২০১৬ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

এর আগে প্রবাসীদের কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। এই লক্ষ্যে যে প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং দেশের সব অঞ্চল থেকে কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সব অভিবাসী কর্মীর কল্যাণ নিশ্চিত করা।

নোটিশে বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়- বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে বিমান ভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা থেকে দুবাইয়ের পূর্বের বিমান ভাড়া ৩০ হাজার টাকা হলেও এখন তা ৯০ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ঢাকা থেকে সৌদি আরব রুটের ৪৫ হাজার টাকার বিমান টিকিট এখন এক লাখ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণকারী যাত্রীদের করা ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে যাতে দেখা যায়, টিকিটের সংকট থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ফ্লাইটে বিপুলসংখ্যক আসন ফাঁকা যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, টিকিট সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশ বিমান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

টিকিট কারসাজির মাধ্যমে উচ্চ টিকিট মূল্যের কারণে একদিকে প্রবাসী শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে যেতে পারছেন না, অপরদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।