1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ

‘সাধারণ ক্ষমা’র চিন্তা আ.লীগে

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১২৩ বার দেখা হয়েছে

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপ পর্যন্ত যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করা এসব প্রার্থীর জয়ের পাল্লা ধাপে ধাপে ভারী হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে বিরোধের জের ধরে সহিংসতার ঘটনায় প্রাণহানিও হয়েছে অনেক। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি রয়েছে আওয়ামী লীগের। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় ঐক্যের ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। কিন্তু ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতরে যে বিরোধ ও বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে তাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্তে অটল থেকে ঐক্য ফেরানো সম্ভব নয় বলে মনে করছে দলটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক যুগ্ম সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদক দেশ রূপান্তরকে বলেন, শাস্তি বলবৎ রেখে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাতে হিমশিম খেতে হবে। সাধারণ নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে নির্বাচনমুখী করতে হলে বিদ্রোহী সবাইকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা ছাড়া বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের কয়েক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, দেখা গেছে, ইউপি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। সে কারণে এমন বিদ্রোহীদের শাস্তির আওতায় রেখে ঐক্য ফেরানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

ওই নেতারা আরও বলেন, এবারের ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্রের দ্বৈতনীতির কারণে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে এবং নৌকার পরাজয় ঘটেছে। এ দায় দলের যারা বিদ্রোহ প্রকাশ করে নির্বাচন করেছেন এবং জিতেছেন তাদের হতে পারে না।

প্রসঙ্গত, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এবার কেন্দ্রে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে কোথাও কোথাও মনোনয়ন বাতিলের ঘটনা ঘটেছে।

কেন্দ্রের দ্বৈতনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের ওই নেতারা ব্যাখ্যা করে বলেন, কেন্দ্র থেকে একদিকে জানানো হলো বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া যাবে না। তাতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। আবার বিদ্রোহীও হওয়া চলবে না। এবার বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো ইউপি নির্বাচনবিমুখ ছিল। সেক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা জিতবেএটাই স্বাভাবিক। আবার কোনো জেলায় দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দিয়ে উন্মুক্ত রাখা হলো আর কোনো জেলায় দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়া হলো।

কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের ওই নেতারা বলছেন, দ্বৈতনীতির কারণেই বিদ্রোহীদের কাছে নৌকার পরাজয় ঘটেছে। তাহলে নিচের সারির নেতাদের (বিদ্রোহী) শাস্তি কেন হবে?

ময়মনসিংহ মহানগর শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান শান্ত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) যখন যে সিদ্ধান্ত নিতে হয় নেবেন। উনি যদি মনে করেন সংগঠনের জন্য ক্ষমা করে দিতে হবে, তিনি তাই করবেন। আমি মনে করি বিদ্রোহীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যাই নেওয়া হোক এবারের ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্রের কঠোর অবস্থান সকলের ভেতরে ভয় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেএটাই সফলতা।’

এবার বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি কেন জানতে চাইলে শান্ত বলেন, ‘তৃণমূল আওয়ামী লীগে সবারই কর্মী বাহিনী থাকে, নিজেদের কর্মী বাহিনী টিকিয়ে রাখার জন্য দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও অনেকেই ভোট করেছে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, ‘নিজেদের সিদ্ধান্তহীনতায় অনেক জায়গায় বিদ্রোহী হয়েছেন।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) মির্জা আজম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত এবং শাস্তি পাওয়া নেতাদের ক্ষমা করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। দলের গঠনতন্ত্রেও এই বিধান রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তবে পৌরসভা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী ছিলেন তারা এখনো মাফ পাননি।

আজম বলেন, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন তারা শাস্তির আওতায় এখনো আছেন। কিন্তু চলমান সাংগঠনিক কার্যক্রমে উপস্থিত থাকেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেলা-উপজেলা সফরে গিয়ে তেমন নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি এখনো পড়তে হয়নি আমাদের।’

আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) এস এম কামাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কিছু কৌশল গ্রহণ করতে হয়। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে শাস্তিও তেমন কিছু হতে পারে।’ তিনি বলেন, বিদ্রোহীদের শাস্তি তো বড় কিছু নয়। পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়ে থাকে। বহিষ্কার তো নয়।

ঐক্য ফেরাতে বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হবে কি নাএমন প্রশ্নে কামাল বলেন, ‘এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাবে না। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। অপরাধ বিবেচনা করে মাফও পেয়ে যেতে পারেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি বলেন, একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচন হওয়ায় এখানে প্রতীক রেখে নির্বাচন করলে কখনই বিদ্রোহী দমন করা যাবে না। উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক রেখে নির্বাচন করলে সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, বিদ্রোহী হওয়ার অপরাধে কোনো ইউনিয়নের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অনেক দুরূহ ব্যাপার। তাতে সেখানে সংগঠনের ক্ষতি হবেই। তার দাবি, সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হলে বিদ্রোহী প্রার্থী সবাইকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই।

ওই নেতা দাবি করেন, বিএনপিসহ অন্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী দমনে সফল হতে পারত। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির কৌশলের কাছে হেরেই বিদ্রোহীর ছড়াছড়ি দেখা দিয়েছে।

এদিকে ইউপি নির্বাচনে প্রতীক চায় না এমন কেন্দ্রীয় নেতারা এক জোট হচ্ছেন। তৃণমূলের এই নির্বাচনে প্রতীক তুলে দিতে যেকোনো মূল্যে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন তারা। ওই নেতারা গত রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘আড্ডায়’ বসেন। সেখানে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আগামী ইউপি নির্বাচনে প্রতীক না রাখতে তিনি সর্বোচ্চ অনুরোধ করবেন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজন হলে এর জন্য নেত্রীর পা ধরতেও রাজি আমি’।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com