1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন

শিশুশ্রম নিরসনে প্রয়োজন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি জিনাত আরা আহমেদ

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৮
  • ৭১ বার দেখা হয়েছে

একটি শিশু মাতা-পিতাসহ একটি জাতির আশা, আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশা ও স্বপ্নের অপর নাম। সাধারণভাবে জন্ম থেকে আঠারো বছরের কম বয়সি মানুষের পরিচয় হলো শিশু। সে আগামী দিনের একজন প্রত্যাশিত কর্মক্ষম মানবসম্পদ, সঠিক পরিচর্যায় যার বেড়ে ওঠার কথা মানুষের প্রাপ্য সকল মৌলিক অধিকার আর মর্যাদা নিয়ে। কিন্তÍ আর্থসামাজিক টানাপোড়েন আর জীবনের বাস্তবতায় অনেক শিশুকে শৈশব আর কৈশোরের সব চাওয়া-পাওয়া, আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে বহন করতে হয় পরিবারের দায়িত্ব, নিয়োজিত হতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে।

শিশুশ্রম শিশুর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, শিশুর শৈশব কেড়ে নেয়, শিশুকে তার শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও সেই সমস্যাকে জটিল করে তোলে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও শিশুশ্রম বলতে বুঝিয়েছে এমন শ্রম যা শিশুকে শৈশব থেকে বঞ্চিত করে তাদের সকল সম্ভাবনা ও মর্যাদা নষ্ট করে অর্থাৎ সেই শ্রম তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও শিশুশ্রমের রাহুমুক্ত নয়। যে বয়সে একটা শিশুর বই, খাতা, পেন্সিল নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া, আনন্দিত চিত্তে সহপাঠীদের সাথে খেলা করার কথা, সেই বয়সেই শিশুকে নেমে পড়তে হয় জীবিকার সন্ধানে। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেক মাতাপিতা ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। স্বল্পশিক্ষিত মাতাপিতা দারিদ্র্যর কষাঘাতে যখন পরিবারের ভরণপোষণে ব্যর্থ হন তখন তারা সন্তানকে স্কুলে পাঠানো এবং লেখাপড়ার খরচ জোগাতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তারা মনে করেন স্কুলে থাকার সময়টুকুতে সে যদি কাজে নিয়োজিত থাকে তাহলে সংসারের আয়ে সংকুলানে সহায়ক হয়।

আবার নদীভাঙন, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস- এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক শিশু মাতাপিতার সাথে ছিন্নমূল মানুষ হিসেবে শহরে আসে কাজের সন্ধানে। এমন বাস্তবতায় কিছু মুনাফালোভী লোক স্বল্প মজুরির বিনিময়ে শিশুদের কাজে লাগায়। আবার সুযোগ পেয়ে অধিক সময় কাজে নিয়োজিত রাখে। প্রধানত দুটি সেক্টরে বাংলাদেশে শিশুশ্রম বিরাজমান। আনুষ্ঠানিক সেক্টর, যেমন শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, জাহাজভাঙা ইত্যাদি এবং অনানুষ্ঠানিক সেক্টর যেমন- কৃষি, পশুপালন, মৎস্যশিকার/ মৎস্যচাষ, গৃহকর্ম, নির্মাণকর্ম, ইটভাঙা, রিকসা-ভ্যান চালানো, দিন মজুরি ইত্যাদি। কিন্তু সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয় শিশুকে শ্রমে নিয়োজিত করার ক্ষেত্রেও শর্ত আরোপ করা হয়েছে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা ২০১০ এ। এতে ১৮ বছরের নীচে শিশুকে কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেওয়া আইনত দ-নীয় অপরাধ।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবিক অর্থে অল্প মজুরি দিয়ে অধিক কর্মঘণ্টায় নিয়োজিত রাখা যায় বলে তাদের কাজে নিয়োগ দিতে মালিকপক্ষের আগ্রহ বেশি থাকে। অনেক সময় কোনো মজুরি ছাড়াই পেটেভাতে কিংবা সামান্য মজুরিতে শিশুদের কাজে রাখা হয় ।

বাংলাদেশ সংবিধানে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে এবং জবরদস্তিমূলক শ্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ধরনের শ্রমসহ সবধরনের শ্রমসাধ্য কাজ থেকে শিশুদের প্রত্যাহার করে তাদের জীবনকে অর্থবহ করে তোলাই জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালার লক্ষ্য। এ নীতিমালায় শিশু বিকাশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো শিশু দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজ করে; নিরাপত্তাহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে; সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে; বিশ্রাম বা বিনোদনের কোনো সুযোগ না পায়; যা তার শিক্ষাজীবন ব্যাহত করে এবং এমন কোনো কাজে নিয়োজিত হয় যা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অমর্যাদাকর তবে মালিক বা নিয়োগকর্তা শিশু অথবা তার অভিভাবকের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। চুক্তি অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুকে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কাজের সম্পূর্ণ শর্ত থাকতে হবে, যাতে দৈনিক কর্মঘণ্টা, কর্মতালিকা, নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত বেতনসহ সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন ছুটির উল্লেখ থাকবে। লেখাপড়া অথবা দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং চাকরিচ্যুতির কমপক্ষে একমাস পূর্বে অবহিত করতে হবে। শিশুরা সহজেই কারিগরি বিষয় রপ্ত করতে পারে, এজন্য শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রচলিত আইনের আলোকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ নীতিমালায়। যাতে আগামী দিনে তারা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নিজেদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

স্বাধীনতার পর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রবর্তন করা হয় শিশু আইন ১৯৭৪। পরবর্তীতে জাতীয় শিশুনীতি-১৯৯৪ প্রণয়ন করা হয়। শিশুদের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০০৫-২০১০ গ্রহণ করাসহ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুসমর্থনে বাংলাদেশিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং তৈরি পোশাক শিল্প থেকে শিশুশ্রম প্রত্যাহারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তারপরও শিশুশ্রম নিরসন তথা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে শিশুদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এখনো সম্ভব হয়নি। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ইইঝ) প্রাক্কলিত শিশুশ্রম জরিপ থেকে দেখা গেছে, দেশে ১৭ লক্ষ শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি এ শিশুরা পূর্ণকালীন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। সবমিলিয়ে দেশে ৩৪ লক্ষ ৫০ হাজার শিশু কোনো-না-কোনোভাবে শ্রমের সাথে যুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন কৌশল আজ তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশের জন্য একটি মডেল। আজকে যে শিশু বা কিশোর, আগামী দিনে সেই হবে এ উন্নয়ন কৌশলের মূল চালিকাশক্তি। এই শিশু কিশোরদের আধুনিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিশুশ্রম এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা। একটি স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তির রয়েছে মানবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। সুষম সমাজ গড়ে তুলতে শিশুর মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে সর্বাগ্রে। তাই শ্রমসাধ্য কাজ থেকে শিশুদের প্রত্যাহার করে তার সার্বিক বিকাশ নিশ্চিতকরণে আমাদের থাকতে হবে মানবিক চেতনাবোধ এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com