তারার নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মর্ত্যের সেই মহাতারকার আলোয় জ্বলজ্বল করেছে ফুটবলের বিখ্যাত ও বড় সব স্টেডিয়াম। সেই মহাতারকা এখন সৌদি আরবে। বিশ্ব ফুটবলের কেন্দ্র ইউরোপ ছেড়ে সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় গিয়েছেন মরুভূমির দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে। সেখানে ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখিই হতে হচ্ছে পর্তুগিজ মহাতারকাকে। ‘সিআরসেভেন’কে খেলতে হবে ছোটখাটো সব স্টেডিয়ামে হাজার কয়েক দর্শকের সামনে অখ্যাত সব ক্লাবের বিপক্ষে। তাঁকে মানিয়ে নিতে হবে মরুভূমির অসহ্য গরমের সঙ্গে।নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো সৌদি প্রো লিগে নাম লিখিয়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও জুভেন্টাসের মতো বিশ্বসেরা ক্লাবে খেলা রোনালদোর জাদুতে এত দিন মুগ্ধ হয়েছেন থিয়েটার অব ড্রিমস সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ও ওল্ড ট্রাফোর্ডের মতো আইকনিক স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাওয়া দর্শক।
সেই রোনালদো আড়াই বছরের জন্য যোগ দিয়েছেন সৌদি ক্লাব আল নাসরে। এই আড়াই বছরে তাঁর আয় হবে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। তবে ফুটবলে বিশ্ব রেকর্ড বেতনে আল নাসরে যোগ দেওয়া রোনালদোর জন্য সৌদি ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাও অনেক কঠিন কাজ হবে।রোনালদোর সৌদি আরব অভিষেক হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। রিয়াদের যে প্রদর্শনী ম্যাচে রোনালদো খেলবেন লিওনেল মেসির পিএসজির সঙ্গে। ম্যাচটি অবশ্য আল নাসরের জার্সিতে খেলবেন না রোনালদো, খেলবেন সৌদি অলস্টার একাদশের হয়ে। পরের রোববারই অবশ্য আল নাসরের হয়ে অভিষেক হওয়ার কথা তাঁর। প্রো লিগের যে ম্যাচে নাসরের প্রতিপক্ষ ইত্তিফাক।
১৬ দলের প্রো লিগে খেলতে উপসাগরীয় শহর দাম্মাম থেকে লোহিত সাগরতীরের জেদ্দাসহ আরব মরুভূমির মাজমা’হ ও হোফুফের মতো ছোট ছোট শহরেও যেতে হবে রোনালদোকে।তবে সৌদি আরবের সব মাঠই ছোট নয়। আল হিলাল ও আল ইত্তিহাদের মতো ক্লাবগুলোর ঘরের মাঠে ৬০ হাজারের বেশি দর্শক খেলা দেখতে পারেন। তবে প্রায় অর্ধেকের মতো ক্লাবের স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ১০ হাজারের কম। কিছু মাঠে তো অ্যাথলেটিক ট্র্যাকও আছে।
সৌদি আরবের পত্রিকা আল রিয়াদিয়ার প্রধান সম্পাদক মকবেল আল-জাবনি তো বলে দিলেন বেশির ভাগ স্টেডিয়ামই মানসম্মত নয়, ‘অনেক সময়ই স্টেডিয়ামগুলো খুব ভালো অবস্থায় থাকে না। রোনালদো যত দর্শকের সামনে খেলে অভ্যস্ত, তেমন দর্শক থাকবেন না। গ্যালারিভরা দর্শক এখানে থাকে না।’রোনালদো সেই অবস্থা বদলাতে পারবেন কি না, কে জানে! তাঁর ক্লাব আল নাসরের মরসুল পার্ক স্টেডিয়ামে দর্শক ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। রিয়াদের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত এই মাঠেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে সিআরসেভেনকে।
আল নাসর আগে প্রতিপক্ষের মাঠে বেশির ভাগ ম্যাচই খেলতে যেত বাসে করে। ক্লাবসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, রোনালদো আসার পর ভাড়া বিমানে করেই এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরবের গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচার জন্য এমনিতেই প্রো লিগের মৌসুম চলে আগস্ট থেকে মে পর্যন্ত। তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বর ও মার্চ-এপ্রিল-মেতে সন্ধ্যায় যখন খেলা চলে, তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশেই থাকে। আল রিয়াদিয়ার সহকারী সম্পাদক সালেহ আল-খলিফ অবশ্য আশাবাদী এমন গরমে মানিয়ে নিতে পারবেন রোনালদো, ‘আবহাওয়াটা রোনালদোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তবে আমার মনে হয়, সে এর সঙ্গে মানিয়ে নেবে ও খুব ভালো করবে।’ইতিহাস-ঐতিহ্যে-সাফল্যে সমৃদ্ধ ক্লাবেই এত দিন খেলে এসেছেন রোনালদো। এবার তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আল নাসর। আল হিলাল ও আল ইত্তিহাদের মতো ক্লাব মিলে ছয়বার জিতেছে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ। সৌদির শীর্ষ লিগের নয়বারে চ্যাম্পিয়ন আল নাসর মাত্র একবারই এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠে রানার্সআপ হয়েছে, সেটিও ১৯৯৫ সালে।
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের সঙ্গে সৌদি প্রো লিগের কোনো তুলনাই হয় না। তবে এই লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ বর্ণনা করতে গিয়ে অনেকেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কথা টানেন। সৌদি লিগ প্রথম চালু হয় ১৯৭৬ সালে, তবে ১৪ বছর আগে শুরু হয় পেশাদার প্রো লিগ। এই ১৪ বছরে ৬টি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্রো লিগে।
প্রো লিগে ৪৮টি দেশের ১২৮ জন বিদেশি খেলোয়াড় আছেন। একটি দল সর্বোচ্চ আটজন বিদেশিকে নিতে পারে। সৌদি আরবে রোনালদোর প্রথম কাজ হবে আল নাসরকে লিগের শীর্ষে তোলা ও চার বছর পর চ্যাম্পিয়নের স্বাদ দেওয়া। খলিফ মনে করেন, রোনালদোর কাজটা সহজ হবে না সৌদিতে। কেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন খলিফ, ‘রোনালদো কিংবদন্তি। আর বাকি সব দল মাঠে খেলতেই নামবে রোনালদোকে হারাতে।’
রোনালদোকে থামানোই যে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা প্রতিপক্ষের জন্য।