1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

অর্থের উৎসের অনুসন্ধানে সিআইডি ॥ ফেরাতে ইন্টারপোলে পুলিশের চিঠি ১৩ অপরাধে হাত পাকিয়েছে আরাভ আরাভ রবিউল হৃদয় নামে কাউকে চিনি না -বেনজির

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩
  • ৬৯ বার দেখা হয়েছে

ছিঁচকে চুরি থেকে হত্যা-গুম-ধর্ষণসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধেই হাত পাকিয়েছেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ বহুল আলোচিত দুবাইয়ের এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ১৩ ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। শুধু গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার ৯ মামলাতে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে। প্রতারণা ও চোরাচালান করে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। আরাভ খানের বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎসের অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থায় (ইন্টারপোল) চিঠিও দেয়া হয়েছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরাভ খানের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের নাম উঠে আসে। এরপর নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাবেক এই পুলিশপ্রধান জানান, ‘আরাভ ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয় নামে আমি কাউকে চিনি না।’ সম্প্রতি দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও চলচ্চিত্র তারকাদের আমন্ত্রণ জানান আরাভ খান। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে জানা যায় এই আরাভ খান ২০১৮ সালে পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পলাতক আসামি। তার প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে হৃদয় ওরফে সোহাগ। মামলার পরপর তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়ে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট তৈরি করেন। ভারতেও তিনি দুই হাজার টাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। হঠাৎ করেই গত কয়েক বছরে তিনি দুবাই গিয়ে অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট কেনাসহ বিশাল বড় স্বর্ণের দোকান দেওয়ার ঘোষণা দেন।

জানা গেছে, প্রলোভনে ফেলে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্লাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের সদস্য ছিলেন আরাভ খান। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই বনানীর বাসায় এসবি কর্মকর্তা মামুনকে ডেকে নিয়ে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করেন। পরে গাজীপুরের একটি জঙ্গলে নিয়ে মরদেহটি পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে ভারতে চলে যান আরাভ। সেখানে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। তা দিয়েই পাড়ি জমান দুবাইয়ে। দুবাই গিয়ে জড়িয়ে পড়েন স্বর্ণ চোরাচালানে।

সম্প্রতি আরাভ খান ফেসবুক লাইভে দাবি করেন, ‘আমি খুনের সঙ্গে জড়িত না। মামলায় আমার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেটা যদি আমার অপরাধ হয়, আমি কথা বলেছি, গুমের সঙ্গে আমি জড়িত। সেই শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলিশ মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে রবিউল ছাড়াও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকেও আসামি করা হয়। মামলার নথি থেকে জানা যায়, রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লা ও লাকী বেগমের ছেলে।

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর মামুন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর রবিউল ইসলাম পরিচয় দিয়ে অপর একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। প্রায় ৯ মাস কারাভোগের পর ওই যুবক দাবি করেন, তিনি আসল রবিউল ইসলাম নন, তার প্রকৃত নাম আবু ইউসুফ। রবিউল ইসলামের কাছ থেকে মাসিক নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে আসামির পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।

এদিকে রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের অর্থের উৎস খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের মানিলন্ডারিং শাখা। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।’

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, স্বাভাবিক উপায়ে অল্প সময়ে আরাভ খানের এত বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়ার কথা নয়। দুর্নীতির টাকা অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ তার মাধ্যমে দুবাইয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের একটি সূত্র জানায়, আরাভের অর্থের গতি প্রবাহ খুঁজে বের করতে কয়েকটি সম্ভাব্য সূত্র ধরে কাজ চলছে। পরবর্তী সময় তার অন্যান্য দেশের পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক মানিলন্ডারিং সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিস্তারিত সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হবে। এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অব মানিলন্ডারিং সংস্থারও সহায়তা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ এই গ্রুপের সদস্য।

এদিকে প্রবাসী এক সাংবাদিকের সঙ্গে রবিউল ওরফে আরাভ খানের একটি অডিও আলোচনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই অডিওতে আরাভ খানকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমার পেছনে কে আছে তা শুনলে তুই তাদের পা ধরে মাফ চাইবি।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, আরাভ খানের পেছনে বাংলাদেশের এমন কোনো ব্যক্তি থাকতে পারেন, যার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের যোগাযোগ রয়েছে। এ জন্যই তিনি অস্ত্র ও খুনের এক ডজন মামলার ফেরারি আসামি হয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত ‘কিছুই হবে না’ বলে বক্তব্য দিচ্ছেন।

এদিকে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি আরাভ ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয় নামে কাউকে চেনেন না। এমনকি তার সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয়ও নেই। গতকাল বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বেনজীর আহমেদ এ কথা জানান।

বেনজীর আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আমি আমার ল’ এনফোর্সমেন্ট ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় খুনি, সন্ত্রাসী, ড্রাগ ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ভেজালকারী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, কখনোই সখ্য নয়। আপনাদের অফুরান ভালোবাসা, সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।’

ইন্টারপোলে পুলিশের চিঠি : হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মনজুর রহমান খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দুবাই থেকে আরাভকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় একটি খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারে ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com