নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ৬৪ জেলাতেই মিলছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯ হাজার ৪৮৩ জন এবং মারা গেছেন ৩২৭ জন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১১৯ জন, মারা গেছেন ১৪ জন। ঢাকার বাইরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গতকাল আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ হাজার ৬২ জন এবং ঢাকার বাইরের বাসিন্দা ১ হাজার ৪৫০ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯ হাজার ৫৭২ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৬৫২ জন। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৫৩৬ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ১১৬ জন। মহানগর বাদে ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৫২০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৩৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৩৯ জন, খুলনা বিভাগে ৪৩৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩১১ জন, রংপুর বিভাগে ২০২ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৩১ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৪১ জন। দেশের সব জেলাতেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এডিস মশা নিধন কার্যক্রম শুধু ঢাকাতেই পরিচালনা করলে হবে না, সারা দেশেই এটি জোরদার করতে হবে। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ একটি মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ। এটি কারও একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কাজেই আমাদের সবাইকে মিলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। আমরা সচেতনতার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’ জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রতিটি জেলাতে আমরা ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি। তার মানে হলো প্রতিটি জেলাতেই এডিস মশা আছে। কাজেই এখন সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমটা হওয়া উচিত। এমনকি শুধু এই মৌসুমে নয়, সারা বছরই মশা নিধন কার্যক্রমটা চলমান থাকা প্রয়োজন।’
ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর গৃহীত ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয় মনে করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মানবাধিকার কমিশনের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই বছরে ডেঙ্গু মারাত্মক হয়ে উঠেছে। কমিশন মনে করে, পুরো দেশে এডিস মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই স্থানীয় সরকারের প্রতিটি ইউনিটকে কাজে লাগিয়ে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
পটুয়াখালীতে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঈদ পালন করতে পটুয়াখালীতে আসা লোকজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও এখন তা জেলার উপজেলাগুলোর গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্ধারিত ওয়ার্ডের মেঝে ও করিডোরে হাঁটার পথেও শয্যা দিয়ে রোগীর চিকিৎসা চলছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৫৩১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২৬ জন। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়। তবে এ পর্যন্ত কোনো মৃত্যু নেই।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী- পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৫ জন, দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৬ জন, বাউফলে ২৪ জন, গলাচিপায় ২৪ জন, মির্জাগঞ্জে ২৫ জন, দুমকীতে ৩৫ জন ও কলাপাড়ায় সাতজন রোগী ভর্তি রয়েছেন। আক্রান্তরা সবাই পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের মানুষ।