প্রথম আলো: ডেঙ্গু নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। প্রায় সোয়া লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সাত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: এটা ঠিক, ডেঙ্গু নিয়ে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মানুষ জানতে পারছে, বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুও অতীতের চেয়ে বেশি।
তিনটি কারণে ডেঙ্গু বেশি ছড়াচ্ছে। এডিস মশার জন্য সবচেয়ে সহায়ক তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর তাপমাত্রা এই সীমার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, রাজধানীতে জনঘনত্ব। এ কারণে সংক্রামক রোগ দ্রুত ছড়ায়। তৃতীয়ত, থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে এডিসের বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। প্রবল বৃষ্টিতে মশার ডিম ও লার্ভা ভেসে যায়। সেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে না। রাজধানীর বিরাট এলাকা এখন মশার উর্বর প্রজননক্ষেত্র। এডিস মশা থাকলে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেই।
প্রথম আলো: আপনি যে পরিবেশ ও জনঘনত্বের কথা বললেন, তা তো কলকাতায়ও আছে। ঢাকা আর কলকাতার তাপমাত্রা, অবকাঠামো, জনসংখ্যা প্রায় একই। কলকাতায় কেন পরিস্থিতি ঢাকার মতো ভয়াবহ হলো না? অথবা আমরা কেন কলকাতার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারলাম না।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: আমি তিন সপ্তাহ আগে কলকাতায় ছিলাম। সেখানে বারবার ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতির কথা মনে পড়েছে। ঢাকা ও কলকাতার আবহাওয়ার প্যারামিটারগুলো মোটামুটি কাছাকাছি। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের ধরন একই। কলকাতায় ও ঢাকায় এডিস ইজিপটাই দেখা যায়।
দুই মহানগরের পার্থক্য নীতি, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও জনসম্পৃক্ততায়। কলকাতার নীতিনির্ধারকেরা ডেঙ্গুকে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখেছেন। সেই অনুসারে মশা নিয়ন্ত্রণ ও নিধনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তাঁরা কাজটি করেন সারা বছর। নিয়ন্ত্রণের কাজের ওপর কড়া নজরদারি আছে। কোথাও পানি জমতে দেওয়া হয় না। পানি জমলেই দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ডেঙ্গু বড় সমস্যা, পানি জমানো উচিত নয়—এই বার্তা কলকাতাবাসীর মনে ভালোভাবে গেঁথে আছে। এ বিষয়ে ঢাকাবাসীর তুলনায় কলকাতার মানুষ অনেক বেশি সচেতন।
■ এডিসের সহায়ক তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর তাপমাত্রা এমনই।
■ এডিস মশা মৃদু সূর্যের আলোর দিকে যেতে চায়। সকাল-সন্ধ্যায় এরা সক্রিয় থাকে।
■ উলবাকিয়ার মতো মশা ব্যবহার করে এডিস মশার প্রজননক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
■ আগামী এক-দেড় মাস ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপই থাকবে।বিস্তারিত