নিজস্ব প্রতিবেদক কখনো ইলশেগুড়ি তো কখনো মুষলধারে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত চলেছে গতকালও। তবে আজ থেকে বৃষ্টি কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এদিকে টানা বৃষ্টি-জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছে রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটানা বৃষ্টিতে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বছরজুড়ে দুই সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় বৃষ্টি এলেই অবধারিতভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। গতকাল জুমার নামাজ শেষে কথা হয় দিনমজুর আখলাস উদ্দিনের সঙ্গে। মহাখালীর সাত তলা বস্তিতে থাকেন তিনি। গত তিন দিন রাজধানীজুড়ে প্রবল বৃষ্টির তোড়ে কাজে যেতে পারেননি আখলাস। টানা বৃষ্টিতে পানি জমেছে বসবাসের খুপরিতেও। কাজে না যেতে পারায় হাতও খালি, পড়েছেন বিপাকে। একটি ফুড ডেলিভারি সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করেন আরমান পাটোয়ারী। বৃষ্টিতে দুর্দশা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘গতকাল তেজগাঁওয়ে একটা ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলাম। তখন প্রচ- বৃষ্টি। রাস্তায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সাইকেল নিয়ে পড়লাম গর্তে। আহত হয়েছি, শরীর খারাপ। কিন্তু নিরুপায় হয়ে আজ আবার বেরিয়েছি।’ কথা হয় এক বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মারুফ হোসেনের সঙ্গে। মারুফ থাকেন মহাখালী দক্ষিণপাড়ায়। তার দায়িত্ব দোকান থেকে পণ্যের ক্রয়াদেশ নেওয়া। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে হচ্ছে। কোম্পানি তো আর বসিয়ে বেতন দেবে না। সড়কে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে আছে। আজ অসুস্থ হয়ে গেছি। কিন্তু নিরুপায়।’ এদিকে সড়কের পাশের চা-দোকানি, ফুটপাতের হকারসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টিতে তারা দোকান খুলতে পারছেন না দুই দিন ধরে। দু-এক বার খুললেও বৃষ্টির বাগড়ায় ফের মালামাল গুটিয়ে বাসায় ফিরতে হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মৌসুমি বায়ুর বিদায়বেলায় সাধারণত বৃষ্টি বেড়ে যায়। এবার স্থল নিম্নচাপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বৃষ্টি বেড়ে গেছে।’ আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং এখনো মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার থেকে এ বৃষ্টি কমে আসতে পারে।’ আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশ ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহে ৩৭৮ মিলিমিটার। এ ছাড়া ঢাকায় ৬৫, রাজশাহীতে ৮১, রংপুরে ১০, সিলেটে ৫১, চট্টগ্রামে ৫৫, খুলনায় ৫ এবং বরিশালে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বেশি বৃষ্টি হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে নেত্রকোনায় ৩৫১, নিকলিতে ৩১১, টাঙ্গাইলে ২৩০, ফরিদপুরে ২৩০, যশোরে ১১৯, বগুড়ায় ১৩৪ ও কুমারখালীতে ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।