নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৯২ শতাংশ কোনো ধরনের চিকিৎসা নেয় না। স্বল্পসংখ্যক যারা চিকিৎসা নেয়, তাদের দুই-তৃতীয়াংশ চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিকভাবে মেনে চলে না। শুরুতে চিকিৎসা নিলে এই রোগ থেকে সেরে ওঠা বা রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সঠিক চিকিৎসায় চারজনে একজন সেরে উঠছে।
গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন তথ্য দিয়েছেন। রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এই সম্মেলন হয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের সর্বশেষ ফলাফলে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৮.৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ১২.৬ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে ভুগছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে আজ ১০ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার’।
সংবাদ সম্মেলনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, “শরীরের পাশাপাশি নানা কারণে মনেরও সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রথম বাধা আমাদের ‘মাইন্ডসেট’ বা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে স্টিগমা বা নেতিবাচক সংস্কার। এ কারণে প্রথম বাধাটা আসে নিজের ভেতর থেকে।
”
বিশেষজ্ঞরা মূলত মানসিক রোগকে দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। এর মধ্যে গুরুতর হলো সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিস-অর্ডার, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা, আলঝেইমার্স। সাধারণ মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, শুচিবায়ু, ফোবিয়া বা ভীতি ও বিষণ্নতায় ভোগা। বাইপোলার ডিস-অর্ডার দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা। ওষুধ বা চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয় না।
৩৭ শতাংশ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন দেশের কমপক্ষে ৩৭.৬ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু মনোরোগ বিভাগের প্রধান ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ গুরুতর মানসিক রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়।
নারীদের হার দেড় গুণ বেশি
দেশে প্রতি ছয়জনে একজন মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভোগে। পুরুষের তুলনায় নারীদের এ রোগের হার দেড় গুণ বেশি। বিষণ্নতা বা অন্যান্য মানসিক রোগের ক্ষেত্রে নারীদের হার কয়েক গুণ বেশি।
ডা. হেলাল আহমেদ বলেন, নারীদের মানসিক সমস্যা সারা বিশ্বে বেশি। নারীদের জিনের গড়ন, আর্থ-সামাজিক বঞ্চনা, নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, পরিবারের কারো মৃত্যু ও পারিবারিক অসংগতির কারণে নারীরা এ রোগের বেশি শিকার হয়ে থাকে।
ডা. হেলাল আহমেদ বলেন, দেশে প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, তা প্রায় দুই কোটি। মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে মানসিক রোগ হওয়ার আশঙ্কা কিন্তু তত বেশি থাকে।
৬ শতাংশ কমেছে শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগ
দেশে ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সে শিশু-কিশোরদের প্রায় ১২.৬ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত। ২০০৯ সালের জরিপে এই বয়সী শিশুদের মানসিক সমস্যার হার ছিল ১৮.৪ শতাংশ। শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার ৬ শতাংশ কমেছে।