নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করতে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)। এ জন্য দুই কম্পানিকে সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছে বিসিসি। এর মধ্যে ডায়মন্ড এগ লিমিটেডকে আড়াই কোটি টাকা এবং সিপি বাংলাদেশ কম্পানি লিমিটেডকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার এই মামলার রায় প্রকাশ হয়।
এর আগে গত সোমবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত আদেশ দেয় প্রতিযোগিতা কমিশন। বাজারে কারসাজির মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়ানোর অভিযোগে ২০২২ সালে দেশের ১০টি পোলট্রি ফার্ম ও পোলট্রি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।
এর মধ্যে মামলা নং ৩৯/২০২২, যা ডায়মন্ড এগ লিমিটেডের বিরুদ্ধে এবং মামলা নং ৪৪/২০২২, সিপি বাংলাদেশ কম্পানি লিমিটেডের মামলার এ চূড়ান্ত আদেশ এলো। প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে করা পৃথক দুই মামলার নিষ্পত্তি করে এই জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, কম্পানি দুটি পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়িয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে প্রতিযোগিতা আইনের ১৫ ধারায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে কম্পানি দুটি এই রায়ের বিষয়ে রিভিউ বা আপিল আবেদন করতে পারবে বলেও জানান হাফিজুর রহমান। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিসংক্রান্ত মামলায় কাজী ফার্মস ও সাগুনা ফুডস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা জরিমানা করেছিল বিসিসি।
৪৪ প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা হয়েছিল জানা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে বাজার ‘অস্থিতিশীল’ করার অভিযোগে নিত্যপণ্য প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী ৪৪টি কম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
চাল, তেল, সাবান, আটা, ডিম ও মুরগি উৎপাদন ও সরবরাহ খাতের এসব কম্পানির বিরুদ্ধে দাম বাড়ানোসহ আরো কিছু অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে কমিশনেই পৃথকভাবে এসব মামলা করা হয়েছে। প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী, উৎপাদন, সরবরাহ, খুচরা ও ভোক্তা যেকোনো পর্যায় থেকে কমিশনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। আবার কমিশন নিজেও মামলা করতে পারে। এসব কম্পানির বিরুদ্ধে কমিশন নিজেই মামলা করে।
কভিড মহামারির পর বিশ্ববাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পণ্য পরিবহনে জাহাজের ভাড়া বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে পড়ে। এ সময় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। এর মধ্যে চাল, সয়াবিন তেল, চিনি, প্রসাধনসামগ্রী, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম ৪০ শতাংশ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অভিযানে নামে।
এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অভিযানকালে বেশ কিছু অনিয়ম চিহ্নিত করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বিভিন্ন কম্পানির প্রতিনিধিদের ডেকে বৈঠক করে সংস্থাটি। নিত্যপণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে বাড়াতে ভোক্তা অধিকারের চিহ্নিত অনিয়ম এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা দাম নিয়ে কারসাজির তথ্য যাচাই-বাছাই করে এসব কম্পানির বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার তথ্য পেয়ে প্রতিযোগিতা কমিশন মামলায় যায়।
বেশি মামলা করা হয়েছিল চাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কম্পানির বিরুদ্ধে। এ খাতের ১১টি বড় প্রতিষ্ঠান ও আটটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আটা-ময়দা উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত আটটি, ডিম উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ছয়টি, ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত ছয়টি, সাবান ও ডিটারজেন্ট উৎপাদন ও বিপণনে যুক্ত ছয়টি কম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গতকালের দুটি রায়ের আগে পোলট্রি খাতের আরো দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় দেয় কমিশন। বাকিগুলোর তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে