বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকেরা আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ফটোসেশনে অংশ নেন সবাইছবি: পিআইডি
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ সোমবার ঢাকায় বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর কূটনীতিকেরা। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতদের প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য তাঁদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পরে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকেরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বাংলাদেশিদের জন্য তাঁদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছে না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই উপকৃত হবে।’
এ সময় বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ইতিমধ্যে বুলগেরিয়া বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্য দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য–সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে ১৫ জন প্রতিনিধি তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেছেন, ‘ডিসেম্বর মাসে গোটা মাসজুড়ে আমরা বিজয় উদ্যাপন করি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সঙ্গে এমন একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ (পারস্পরিক যোগাযোগ) আলোচনায় অংশ নিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’
বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় ১৬ বছর ধরে অত্যাচার, শোষণ, বলপূর্বক গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরেন তিনি। অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের বিষয় উল্লেখ করে দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছিল, সেসব কথাও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আকারে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এই মিস ইনফরমেশন (ভুল তথ্য) ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীরা যে ব্যাপক টাকা পাচার করে নিয়ে গেছেন, তা দিয়ে তাঁরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথাও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সংস্কার ও নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পর্কেও ইইউ প্রতিনিধিদের বিশদভাবে জানিয়েছেন তিনি। সংস্কারপ্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ইইউ প্রতিনিধিরা। পরামর্শ ও সুপারিশ জানিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন তাঁরা।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের বৈঠককে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বৈঠকে দিল্লিতে আছেন, এমন অনেক ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম আগে কখনো হয়নি।
বৈঠকে কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি, প্রতিটি বিষয়ে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা অবশ্যই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে যাব।’