মুহম্মদ আকবর
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখে গঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের উপকমিটিগুলো। কেন্দ্রের নির্দেশে ইতোমধ্যে উপকমিটি গঠনের কাজও শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। জানা গেছে, গত কমিটিতে থাকা নেতাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। ফলে উপকমিটিতে বড় পরিবর্তন আসছে না। বিগত দিনে বিতর্কের জন্ম দিয়ে যারা দলকে বিব্রত অবস্থা ফেলেছিলেন, তাদের এবারের উপকমিটিতে ঠাঁই হবে না বলে দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। অন্যদিকে কয়েকজনকে জাতীয় কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। তাই তাদের স্থলে পরীক্ষিত নতুন মুখ আনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পদপ্রত্যাশীরা দৌড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। ভিড় জমাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়েও।
উপকমিটি গঠনে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, কমিটি গঠনের কাজ তারা শুরু করেছেন। গত কমিটিতে যারা কাজ করেছেন তাদের বেশিরভাগ কাজে অভিজ্ঞ। নতুন করে ট্রেইনআপ করানোর বিষয় থাকবে না। তাই এবারও তাদের রাখা হবে। এর মধ্যে যারা নিজেদের ইমেজ নষ্ট করেছেন, দলকে বিব্রত অবস্থায় ফেলেছেন তাদের বিষয়টিও পরিষ্কার। সুতরাং কমিটি গঠনে খুব বেশি চ্যালেঞ্জ নেই। তারা জানান, মার্চ মাসের মধ্যে এই কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা তাদের। তবে মার্চ মাসে দলীয় কর্মসূচি বেশি থাকায় কোনো কোনো উপকমিটি গঠনে বিলম্বও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘কমিটি হয়ে যাবে। দেখেশোনে কমিটি করার তাগিদ ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই কমিটি হবে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকা, বিতর্কিতদের ঠাঁই না দেওয়া এবং সর্বপরি ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার বিষয়ে অবশ্যই মনোযোগী হবেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।’
গত উপকমিটি গঠনের আকার সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সবাইকে অনধিক ৪০ জন রাখার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির ক্ষেত্রে বেশি সদস্য নেওয়ার বিষয়ে ছাড় ছিল। বর্তমানে এর আকার নিয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও অনধিক ৪০ জন মাথায় রেখেই কমিটি গঠনের কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
কিছুদিন আগে দলের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপকমিটি একটি সেমিনার করেছে। সেখানে গত কমিটির নেতারাই ছিলেন। এরই মধ্যে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন কমিটিতেও তাদের রাখা হচ্ছে। একইভাবে সাংস্কৃতিক উপকমিটি সংস্কৃতি অঙ্গনের একটি মিলনমেলার আয়োজন করে, যেখানে দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে গত কমিটির নেতাদের।
জানতে চাইলে দলের নতুন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘কমিটি তো তেমন হেরফের হবে না। অলমোস্ট গত কমিটিটাই থাকবে। যারা নিষ্ক্রিয় ছিল, তাদের কেউ কেউ হয়তো বাদ পড়বেন। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কাদের ভাইয়ের (দলের সাধারণ সম্পাদক) সঙ্গে আলাপ করে দেখি। আশা করি, বেশি দেরি হবে না; দ্রুতই কমিটি হয়ে যাবে।’
উপকমিটি গঠনের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের নতুন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রস্তুত করছি এখনো শেষ হয়নি। তিনি জানান, নতুন ও পুরাতন মুখ মিলিয়েই কমিটি গঠন করবেন।
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল আমাদের সময়কে বলেন, ‘কমিটিতে তো কেউ বাদ পড়বে, আবার নতুন আসবে। তবে এগুলো নিয়ে এখনো কাজ শুরু করিনি।’
দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানার ভাষ্য, তিনি কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলেন। এ জন্য কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে উপকমিটি গঠনের কাজে তিনি হাত দিয়েছেন। কবে কমিটি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হলে জানতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর। একই দিনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠন করে দলটি। শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছাড়া সম্মেলনের মাধ্যমে সম্পাদকম-লীর সব পদই পূরণ করা হয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি দলের উপকমিটির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিবদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদেও তেমন পরিবর্তন নেই। সাধারণত দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাই বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক উপকমিটির চেয়ারম্যান হয়ে থাকেন। এবার তিনজন নতুন উপদেষ্টা হয়েছেন, যে কারণে নতুন করে উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে তাদের।
এবার অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে। এ কমিটির কো-চেয়ারম্যান করা হয় ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে। আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয় অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমিরকে। আইনবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে। কৃষি ও সমবায়বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. মির্জা জলিল। তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান এবং কো-চেয়ারম্যান করা হয় অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে। দপ্তর উপকমিটির চেয়ারম্যান করা হয় প্রফেসর ড. অনুপম সেনকে। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন একেএম রহমত উল্লাহ ও কো-চেয়ারম্যান হন চৌধুরী খালেকুজ্জামান। ধর্মবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন খন্দকার গোলাম মওলা নকশবন্দী। প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন; কো-চেয়ারম্যান হন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম।
বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর। মহিলাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. সুলতানা শফি; কো-চেয়ারম্যান হন মাজেদা রফিকুন্নেছা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রশিদুল আলম। যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন মোজাফফর হোসেন পল্টু; কো-চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ। শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক; কো-চেয়ারম্যান হন নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদ। শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন আবদুল হাফিজ মল্লিক; কো-চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সিরাজ। সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন আতাউর রহমান এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক।