1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
নির্বাচন ইস্যুতে ভারতের নসিহত অগ্রহণযোগ্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গ্রেপ্তারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সুদানের কর্দোফানে ড্রোন হামলায় শতাধিক বেসামরিক নিহত, সংঘাতের তীব্রতা বাড়ছে টেলিভিশন নির্বাচনি অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত আক্রমণ নিষিদ্ধের নির্দেশ দিলো ইসি শাবনূরের জন্মদিনে ‘দুই নয়নের আলো’-র স্মরণ ডেঙ্গু আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধি, সাম্প্রতিক ২৪ ঘণ্টায় কোন মৃত্যু নেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ২২৫ রানের সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আসছে, আরও অন্যান্য দেশ থেকেও প্রস্তাবনা এসেছে সচিবালয়ে ভাতা বিতর্কে ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাময়িক বরখাস্ত দেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিম্ন আয়ের মানুষের দুঃসময়।

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩
  • ১২৫ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আমিরুল শাওন। থাকেন নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড। আগে অফিসের কাছাকাছি থাকলেও সংসার খরচের লাগাম টানতে দুই বছর আগে মতিঝিল থেকে একটু দূরে বাসা নেন। পুরোনো একটি মোটরসাইকেল কিনে অফিসে আসা-যাওয়া শুরু করেন।

এক সন্তান, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে শাওনের সংসার। প্রথমদিকে মোটরসাইকেল একাই ব্যবহার করতেন। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় যে ব্যয় বেড়েছে তা সমন্বয় করতে শুরু করলেন মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী নেওয়া। বেশকিছু দিন হলো অফিস শেষে মতিঝিলের আশপাশে ভাড়ায় যাত্রী নেওয়ার বাড়তি কাজ শুরু করেছেন। তারপরও সংসার জীবনের অঙ্কে বড় গরমিল তার!

জীবন খাতার হিসাব মেলাতে না পারা শাওন বলেন, আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বছরে একবার বাড়ত। এখন সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়ছে। কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই। প্রথমে তেলের দাম বাড়ল, এরপর দফায় দফায় বাড়ল বিদ্যুতের দাম। এলপি গ্যাসের দামে লাগাম নেই। সরকার ও ব্যবসায়ী এখন ‘দুই ভাই’। কোনো পক্ষই দাম বাড়ানোর নিয়ম মানে না।

তিনি বলেন, সামনে রোজা। অসুস্থ মায়ের ওষুধ, ছেলের স্কুল আর সংসারের খরচ— সব মিলিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছি।

শাওনের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় গেন্ডারিয়ার মুদি দোকানি রাসেলের। তিনি বলেন, ক্রেতাদের অনেকেই পণ্য কেনার ধরন পাল্টেছেন। আগে যারা সবচেয়ে ভালো পণ্য খুঁজতেন, তারা এখন সাধারণ মানের পণ্য কিনছেন। অনেকে আবার বোতলজাত ও প্যাকেট রেখে খোলা পণ্যে ঝুঁকছেন। আসলে সবার হাতেই টান পড়েছে। পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে ভালো ব্যবসা হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি তেমন বাড়েনি।

রং মিস্ত্রি জামাল বলেন, রমজান মাস আসার আগেই কাজ কমে গেছে। নতুন ভবনে কিছু কাজ থাকলেও পুরোনো বাড়ির মালিকরা আর রং করাচ্ছেন না। মাঝেমধ্যে কাজ ছাড়া বসে থাকতে হচ্ছে। আয় রোজগারও কমেছে। পুরাতন আসবাবপত্র বেচাকেনা আগের মতো হয় না। অথচ, খরচ তো থেমে নেই।

ছোট ব্যবসায়ী, দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে মাঝারি ও নিম্ন আয়ের মানুষরা কেউ ভালো নেই। খরচের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। কেউ কেউ খাবারে লাগাম টানার চেষ্টা করছেন, কেউ বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে শহর ছাড়ছেন, অনেকে চাপ সামলাতে গিয়ে জড়াচ্ছেন ঋণের জালে।

ছয় মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে চাল, ডাল, তেল, আটা, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি, ওষুধ ও শিশুখাদ্যসহ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনোটা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আবার কোনো কোনো পণ্যের দাম ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু খেটে খাওয়া ও সীমিত আয়ের মানুষের আয়ের কোনো উন্নতি হয়নি। এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প রাস্তাও নেই সাধারণ মানুষের কাছে।

দ্রব্যমূল্য আর জীবন যুদ্ধের এই সমীকরণ নিয়ে নিজের হতাশার কথা জানালেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মেনে নেওয়া ছাড়া কী বিকল্প আছে? যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ভোগ করবে। যাদের নেই, তারা দুর্ভোগে থাকবে। এছাড়া কোনো বিকল্প দেখছি না। বলে-কয়ে কোনো লাভ নেই।

ভোক্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা তো বলেই যাচ্ছি। মানুষের জীবনমানের অবনমন হচ্ছে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট সীমার বাইরে চলে গেছে। কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা তো আমাদের নেই।

গত বছরের ডিসেম্বরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চার সদস্যের একটি পরিবারে মাছ ও মাংস ছাড়া কম্প্রোমাইজ ডায়েটে প্রয়োজন হয় নয় হাজার ৫৫৭ টাকা। এই ন্যূনতম খরচও মেটাতে পারছেন না ৩৯টি সেক্টরের মধ্যে ৩০টির কর্মীরা।

ফার্মাসিউটিক্যাল, শিপব্রেকিং, ট্যানারি, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড এনামেল, রি-রোলিং মিলস, প্রাইভেট রোড ভেহিক্যাল, লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ফ্যাক্টরি এবং কন্সট্রাকশন অ্যান্ড টিম্বার খাত ছাড়া কোনো সেক্টরের কর্মীদের এই ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা নেই।

অন্যদিকে, মাছ-মাংসসহ রেগুলার ডায়েটের জন্য প্রয়োজনীয় ২৩ হাজার ৬৭৬ টাকা ব্যয় করার সক্ষমতা পাওয়া যায়নি ৩৯ খাতের কারোরই।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বড় কারণ হলেও আগে থেকেই আমাদের মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সমান তালে বেড়ে চলছে। বিশেষ করে চাল, গম, ভোজ্য তেল, চিনি কিংবা গরুর মাংসের মূল্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এমন প্রবণতা রয়েছে।

মাত্র তিন মাস আগের সেই গবেষণায় উঠে আসা চিত্রের তুলনায় বর্তমান অবস্থা আরও খারাপ বলে মনে করছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের হিসাবের সঙ্গে তুলনা করলে এখনকার অবস্থা আরও খারাপ। পুষ্টি নিরাপত্তার জায়গায় ভোক্তাকে অনেক কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে। সব ধরনের খাদ্যের দাম এই সময়ের মধ্যে বেড়েছে। নিম্ন বা সীমিত আয়ের মানুষের আয় সেই অর্থে বেড়েছে বলে মনে হয় না।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি যদি দীর্ঘমেয়াদে অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রথমে কেউ তার খাদ্য তালিকা কম্প্রোমাইজ করে। তার আয় দিয়ে যতটুকু সম্ভব সেটার চেষ্টা করে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদের হলে সেটা সম্ভব হয় না। দীর্ঘমেয়াদের মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্যের ওপর সরাসরি অভিঘাত সৃষ্টি করে। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে যায়। যারা দারিদ্র্যসীমার বাইরে ছিল তারাও এর আওতায় চলে আসে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনই আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন বাড়ছে।

সমাধান কী, সরকারই বা কী করতে পারে— জানতে চাইলে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার হয়ত দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার চেষ্টা করছে। এটা ঠিক আছে। কিন্তু সরকারকে মানুষের আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের নেই, সরকারের ইচ্ছাও নেই বলে মনে করি। রমজান সামনে রেখে সরকার ও ব্যবসায়ীরা তো আশ্বস্ত করেছে দাম আর বাড়বে না। কিন্তু বাজার চলছে বাজারের গতিতেই।

এ বিষয়ে সিপিডির গবেষক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এক কোটি পরিবারকে যে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে সেটা হয়ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু জনগণের যে বৃহদাংশ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন তার বিপরীতে এই সহায়তা পর্যাপ্ত নয়। সহযোগিতা আরও বাড়ানো দরকার। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ নয়, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ যাদের আয় বৃদ্ধির সুযোগ নেই তারা এই পরিস্থিতিতে আরও খারাপ অবস্থায় রয়েছেন।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com