বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক অপরাধমূলক কার্যক্রম। পণ্য বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার, স্বর্ণ-মাদকসহ অন্যান্য দ্রব্য চোরাচালান ও মানব পাচারের মতো অপরাধমূলক কার্যক্রমে হুন্ডি-হাওলার ব্যবহার বৃহৎ রূপ ধারণ করেছে। অত্যন্ত রক্ষণশীলভাবে হিসাব করে দেখা গেছে, দেশে হুন্ডি-হাওলার বাজার এখন ৩০-৩৫ বিলিয়ন (৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আরো গভীর ও গবেষণাভিত্তিক অনুসন্ধান চালালে দেখা যাবে দেশে হুন্ডি-হাওলার বাজার আকৃতি হয়তো এর চেয়েও অনেক বড়।
হিসাব অনুযায়ী, দেশে আন্তর্জাতিক পণ্য বাণিজ্যে হুন্ডি-হাওলার মাধ্যমে লেনদেনকৃত অর্থের পরিমাণ কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স হিসেবে আসছে আরো ১০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া দুর্নীতি ও কালোবাজারির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাচার, স্বর্ণ ও অন্যান্য পণ্য চোরাচালান, মানব পাচারের মতো কার্যক্রমে হুন্ডি-হাওলার অবদান ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ সরকার ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেন্টিং মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্সিং অব টেরোরিজম ২০১৯-২১’ শীর্ষক একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছে। কৌশলপত্রে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের গন্তব্য হিসেবে ১০টি দেশের কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষ করে দুবাই), মালয়েশিয়া, কেইমান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস। এসব গন্তব্যে অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো হুন্ডি-হাওলা।
অভিযোগ রয়েছে, পণ্য বাণিজ্যে কর ফাঁকি দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ হুন্ডি বা হাওলার দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের অনেকেই আন্ডার ইনভয়েসিং (আমদানি মূল্য প্রকৃতের চেয়ে কম দেখানো) করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে পণ্যমূল্যের অপ্রদর্শিত অংশটুকু পরিশোধ করা হয় হুন্ডি বা হাওলার মাধ্যমে। বিষয়টিকে এখন দেখা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য তথ্যে গরমিলের অন্যতম বড় কারণ হিসেবে। চীন ও বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যানে ২০২১ সালে বাণিজ্যের আকারের গরমিল ছিল ৫ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন (৫৬৮ কোটি) ডলারের বেশি। এ গরমিলের পরিমাণ গত বছর আরো বেড়ে ৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন (৭৫২ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যায়। চীনের পর ভারতের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১-২২ অর্থবছরের তথ্যে গরমিল রয়েছে ৩ দশমিক ১৯ (৩১৯ কোটি) বিলিয়ন ডলারের। প্রধান বাণিজ্য গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য পরিসংখ্যানে গরমিল রয়েছে ২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন (২৯৩ কোটি) ডলারের। অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ব্যবধানের তথ্য বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাবে, দেশে পণ্য বাণিজ্যের আড়ালে হুন্ডি-হাওলায় লেনদেন হচ্ছে কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলারের। বিস্তারিত