নিজস্ব প্রতিবেদক
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জরুরি প্রেস ব্রিফিং ডাকায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না—এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালো গুঞ্জন চলছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) জানানো হয়, ‘সমসাময়িক বিষয় নিয়ে’ একটি জরুরি প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করা হবে। ঘোষণাটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে যে উপদেষ্টা সম্ভবত পদত্যাগ করতে পারেন, কারণ নির্বাচনে অংশ নিতে সরকারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ আসন—যার অন্তর্ভুক্ত ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ—থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এই আসনে প্রার্থী হতে তিনি ইতোমধ্যে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন বলেও জানা যায়। তবে ব্রিফিংয়ে তিনি প্রার্থিতা নিয়ে কোনো ঘোষণা দেবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন কি না, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পায়নি। তিনি বলেন, উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত একমাত্র তিনিই জানেন, এবং সঠিক তথ্য প্রেস ব্রিফিংয়েই জানা যাবে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে সরকারের উপদেষ্টা বা যেকোনো পদে থাকা ব্যক্তি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি অনুসারে সরকারি পদে থেকে নির্বাচনি প্রচার চালানো বা প্রার্থী হওয়া নিষিদ্ধ। ফলে কেউ সরকারি দায়িত্বে থাকলে তিনি প্রার্থীতা গ্রহণ করতে পারবেন না এবং অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারেও অংশ নিতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধির সব বিধান কঠোরভাবে কার্যকর হবে। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবার সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রীয় বা সরকারি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কার্যপরিধি আরও কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।
বিশ্লেষকদের মতে, উপদেষ্টা পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আইনগতভাবে অসম্ভব হওয়ায় আসিফ মাহমুদের সম্ভাব্য পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা তীব্রতর হয়েছে। যদি তিনি সত্যিই প্রার্থী হন, তবে তাকে দ্রুতই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারণ তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র জমা ও যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া অত্যন্ত সীমিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
ঢাকা-১০ আসন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এ আসনে তরুণ ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য এবং নগরবাসীর বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা, উন্নয়ন প্রকল্প ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় বড় ভূমিকা রাখে। আসিফ মাহমুদ যদি এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে তাকে নগর উন্নয়ন ও সুশাসন—এই দুই ইস্যুকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনায় আরও উঠে এসেছে, উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে নির্বাচনে দাঁড়ালে তিনি কিছু প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করতে পারেন। তবে সরকারি দায়িত্ব পালন ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্যে স্বার্থসংঘাতের সম্ভাবনা থাকায় তার পদত্যাগই একমাত্র পথ বলে মনে করা হচ্ছে।
জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে যদি তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন, তবে এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে দেখা হবে। কারণ উপদেষ্টা পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। অন্যদিকে, তিনি যদি কোনো রাজনৈতিক বার্তা দেন বা প্রার্থীতা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি হতে পারে।
সবমিলিয়ে, আসন্ন ব্রিফিং রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক গুরুত্ব নিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উপদেষ্টার ভূমিকা, সম্ভাব্য পদত্যাগ এবং ঢাকা-১০ আসনে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা এই ব্রিফিংয়ের মধ্য দিয়েই পরিষ্কার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।