জাতীয় ডেস্ক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক জানাজার ইমামতি করেন। জানাজা শেষে মরদেহটি দাফনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কবরস্থানের দিকে নেওয়া হয়। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ওসমান হাদি নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন এবং নির্বাচন কীভাবে হওয়া উচিত, সে বিষয়ে একটি প্রক্রিয়া তুলে ধরেছিলেন। তিনি আরও বলেন, হাদির দেখানো নির্বাচনী প্রচারণা ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের পদ্ধতি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তার মতে, এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব পেতে পারে।
ড. ইউনূস জানান, জানাজায় বিপুল মানুষের উপস্থিতি ওসমান হাদির রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহের প্রতিফলন। তিনি বলেন, হাদির রেখে যাওয়া চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট মহল তা পর্যালোচনা করবে।
সকালে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে গোসল সম্পন্ন করা হয়। পরে সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে মরদেহটি মিছিলসহ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হয়।
ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলার পেছনের কারণ ও দায়ীদের শনাক্তে তদন্ত জোরদার করেছে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সময় চলন্ত একটি মোটরসাইকেল থেকে ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকদের পরামর্শে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে ওসমান হাদি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সমর্থকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে এ ঘটনার তদন্তের ফলাফল এবং এর পরবর্তী রাজনৈতিক প্রভাব পরিস্থিতির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।