মানুষের জীবনের টানাপোড়েন থাকবেই। কারও জীবনের পথই মসৃণ হয় না। এ কারণে আজ যে রাজা কাল সে প্রজাও বনে যেতে পারেন। এজন্য দরিদ্র মানুষকে পায়ে না ঠেলে বরং তাদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে তারাও অনেক কিছু করতে পারবেন দেশ ও জাতির জন্য। ঠিক তেমনই এক পরশ্রমী ও সাহসী মানব হলেন রেনুকা আরাধ্যা।
খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পেটের দায়ে ছোটবেলায় মানুষের বাড়িতে খাবার ভিক্ষা করে দিন কেটেছে তার। পড়ালেখারও তেমন সুযোগ পাননি। একটু বড় হতেই ঝুঁকি নিয়ে গাছ থেকে নারকেল পাড়ার কাজও করেছেন। আবার কখনও প্লাস্টিক কোম্পানিতে দিনমজুরীও করেছেন। সিকিউরিটি গার্ড ও লাশবাহী গাড়ির ড্রাইভারও হয়েছেন কখনও কখনও।
এসব কাজ করা মানুষটির লক্ষ্য ছিল কোনোমতে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়া। তখনও তিনি ভাবেননি তার ভবিষ্যৎ কতটা উন্নত হতে চলেছে। আজ সেই ভিক্ষা করা মানুষটিই কোটি কোটি টাকার মালিক। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ১০০ কোটির মালিক বনে যেতে পারেন তিনি!
প্রতিবছর তার কোম্পানির লাভ বছরে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। নিজ কর্মগুণেই রেনুকা আরাধ্যা আজ অনুকরণীয়। তার জীবনের গল্প কোনো সিনেমার চেয়ে কম নয়। একসময় না খেয়েও তার দিন কেটেছে। এজন্য ক্ষুধার জ্বালায় ভিক্ষা পর্যন্তও করেছেন। তবে হঠাৎ কীভাবে জীবনের মোড় ঘুরালেন রেনুকা?
বেঙ্গালুরুর ছোট্ট এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রেনুকা। তার বাবা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। তাই নির্দিষ্ট উপার্জনও ছিলো না। এদিকে ৫ জনের সংসার কোনোমতে চলত। বাড়ির পেছনের এক টুকরো জমিতে চাষাবাদ করেই দিন পেটে ভাত জুটত তাদের।
আর যে বছর জমিতে ফসল ফলতো না তখন বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করতেন রেনুকা। তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর, তখন বাবা মারা যান। তার বড় ভাই বিয়ের পর আলাদা হয়ে যান। মা ও দুই বোনের দায়িত্ব রেনুকার কাঁধে এসে পড়ে। তখনই পড়ালেখা ছেড়ে বরফকলে দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এরপর প্লাস্টিক কোম্পানির মজুর হন। এরপর মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঘর ও ছোট দুই বোনকে সামলাতে ২০ বছর বয়সেই বিয়ে করেন রেনুকা। তখন তিনি একটি কারখানায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন। এরপর হঠাৎই তার মাথায় ড্রাইভিংয়ের নেশা চাপে।
এসময় তার পাশে এসে দাঁড়ান স্ত্রী। নিজের গয়না বিক্রি করে স্বামীকে ড্রাইভিংয়ের কোর্স করান। সেখান থেকে চালক হিসেবে দক্ষ হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বের হন রেনুকা। এরপর একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে লাশবাহী গাড়ির চালক হিসেবে নিযুক্ত হন। প্রায় ৪ বছর ৩০০ টিরও বেশি মৃতদেহ বহন করেন তিনি।
এরপর নিজেই কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০০ সালে ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা লোন নিয়ে একটি গাড়ি কেনেন। এরপর দিন-রাত এক করে গাড়ি চালিয়ে রোজগার শুরু করেন। পরের ৪ বছরের মধ্যে আরও ৬টি গাড়ি কিনে ভাড়ায় ব্যবহার কনে তিনি।
৬টি গাড়িতে মোট ১২ জন দিন-রাত কাজ করতেন। এরপর তার গাড়িগুলো আমাজন, লিঙ্কডিন, ওয়ালমার্ট, জেনারেল মোটরসের মতো বড় বড় কোম্পানি নিজেদের কাজে ভাড়ায় নেন। কয়েক বছরের এভাবেই ব্যবসার পরিধি বাড়ান রেনুকা। এরই মধ্যে তিনি ৩০০ গাড়ির মালিক বনে যান।
এবার তিনি ট্যাক্সি সার্ভিস দিতে রাস্তায় নামান নিজস্ব কোম্পানির অনলাইন বুকিং ট্যাক্সি। সেই থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আজ রেনুকা ১৩০০ গাড়ির মালিক। গড়ে তুলেছেন ‘প্রভাস কার’স’ নামক কোম্পানি।
প্রতিবছর তার কোম্পানি প্রায় ৩৮ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন করে থাকে। যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ১০০ কোটি টাকাতে বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী রেনুকা আরাধ্যা।
সূত্র: ইওর স্টোরি/বেটার ইন ইন্ডিয়া