নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়ে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বলেছেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ব্যক্তিগত আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর প্রভাব ফেলতে পারে এমন একটি ঘটনা। তিনি দাবি করেন, এই হামলার মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণকারীদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য থাকতে পারে। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে পঞ্চগড় শহরে আয়োজিত কর্মসূচিতে এসব বক্তব্য দেন তিনি।
সমাবেশটি আয়োজন করা হয় পঞ্চগড়ে শরিফ ওসমান হাদির ওপর সংঘটিত হামলার প্রতিবাদে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও বিচারের দাবিতে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ইকবাল হোসেন, এনসিপির সদর উপজেলা সমন্বয়ক তানবীরুল বারী নয়ন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বক্তব্যে সারজিস আলম বলেন, ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এক বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও দেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে কিছু গোষ্ঠী পরিস্থিতিকে অস্থির করার সুযোগ পাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাটি সেই অস্থিরতারই বহিঃপ্রকাশ।
সারজিস আলম আরও দাবি করেন, যারা আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক প্রভাব নিয়ে সমালোচনামূলক অবস্থান নেয়, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এমন হামলার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করছে। তাঁর মতে, হামলাটি আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কেবল নির্বাচনী প্রতিযোগিতাই নয়, রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সারজিস আলম বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলোর ঐক্য প্রয়োজন। তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগ উঠেছে, যা খতিয়ে দেখা জরুরি।
বক্তব্যে তিনি অতীতের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, পূর্বে বিভিন্ন সংকটে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলো একত্রিত হয়েছিল। তাঁর মতে, সেই ঐক্যকে দুর্বল করার চেষ্টাও বর্তমানে দৃশ্যমান। তিনি রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এবং প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে সারজিস আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট ও ধারাবাহিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, দ্বৈত অবস্থান বা অস্পষ্ট বক্তব্যের ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাঁর বক্তব্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের ওপর জোর দেওয়া হয়।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারাও শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। তারা বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ না হলে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আয়োজকদের মতে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।