জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলাকে জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দেওয়ার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন, এ ধরনের অপচেষ্টা প্রতিহত করতে তারা ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকবেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা রুখে দিতে রাজনৈতিক ঐক্যের বিকল্প নেই বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।
শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর শীর্ষ নেতারা এসব বিষয়ে একমত হন। বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং এর পেছনে একটি গভীর ও বিস্তৃত ষড়যন্ত্র কাজ করছে। তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে তোলা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, হামলার ধরন ও পরিস্থিতি থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের পুরো প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দিতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে এবং প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের মাঠে নামিয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সতর্ক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং কোনো ধরনের অপশক্তিকে ছাড় দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থ ও জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার প্রশ্নে সবাইকে এক কাতারে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বক্তব্যে পারস্পরিক দোষারোপের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বিরোধী শক্তিগুলো সুযোগ পেয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে জাতীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। এ পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলকে তাদের পূর্বের প্রতিশ্রুতি ও দায়িত্বের জায়গায় ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই একটি সংগঠিত গোষ্ঠী এ আন্দোলনের গুরুত্ব খাটো করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, সুসংগঠিতভাবে জুলাইবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, প্রশাসন ও সামাজিক পরিসরে বিভ্রান্তিকর বয়ান ছড়ানোর মাধ্যমে অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারীদের অপরাধী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, রাজনৈতিক ঐক্যের অভাবকে ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান কোনো একক দলের সম্পদ নয়; এটি একটি সম্মিলিত রাজনৈতিক অর্জন, যা রক্ষা করার দায়িত্ব সব পক্ষের। তিনি বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে রাজনৈতিক ঐক্যকেই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেন।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই কার্যকর হবে না। তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের চিন্তায় কিছু দল এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে প্রতিপক্ষকে সুযোগ করে দিচ্ছে।
বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তেজনা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি এবং রাজনৈতিক মতবিরোধ যেন শত্রুতায় রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তি পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তিনি জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।