জেলা প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতে একটি ফেরি থেকে ট্রাকসহ পাঁচটি যানবাহন পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ধলেশ্বরী নদীর মাঝামাঝি স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মোটরসাইকেলচালক রফিক, ভ্যানচালক স্বাধীন এবং প্রবাসী মাসুদ। দুর্ঘটনার পর নিখোঁজদের উদ্ধারে রাতভর তল্লাশি চালানো হলেও রোববার ভোরে উদ্ধার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের নরসিংহপুর এলাকা থেকে যাত্রী ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন নিয়ে একটি ফেরি ধলেশ্বরী নদী পার হওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছানোর পর হঠাৎ করে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক চালু হয়ে যায়। চালু অবস্থায় ট্রাকটি সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল, দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং একটি ভ্যানগাড়িকে ধাক্কা দেয়। একপর্যায়ে সবকটি যানবাহন নদীতে পড়ে যায়।
বক্তাবলী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. রকিবুজ্জামান জানান, বক্তাবলীর পূর্বপাশের ঘাট থেকে ফেরিটি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে ছেড়ে আসে। নদীর মাঝামাঝি পৌঁছানোর পর ট্রাকটি হঠাৎ করে চালু হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা অন্যান্য যানবাহনসহ পানিতে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার সময় ট্রাকচালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও অন্য যাত্রী ও চালকেরা নদীতে নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরপরই নৌ-পুলিশ, থানা পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। রাতের আঁধার, নদীর তীব্র স্রোত এবং শীতল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কার্যক্রমে বেগ পেতে হয়। দীর্ঘ সময় অনুসন্ধানের পর রোববার ভোরে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলো নিহতদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, ধলেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় ফেরি থেকে ট্রাকসহ কয়েকটি যানবাহন পানিতে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ফেরিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং যানবাহন যথাযথভাবে স্থির না রাখার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আপাতত তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। যদি নতুন করে আরও কেউ নিখোঁজ থাকার তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে রোববার সকাল থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নদীতে ডুবে যাওয়া যানবাহন উদ্ধারের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ডুবুরি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হবে। দুর্ঘটনার ফলে নদীপথে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয় এবং যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ ধরনের দুর্ঘটনা ফেরি চলাচলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নিয়মিত তদারকির ঘাটতির বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত সতর্কতা জোরদার করা হবে।