1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

নেই ওষুধের বিজ্ঞাপন ভয়ংকর প্রতারণায় ভোক্তারা ► কোম্পানির অনৈতিক মুনাফা ► বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় চিকিৎসকদের পেছনে

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১ বার দেখা হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি

 

দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধ বিপণন কার্যক্রমের নামে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ডাক্তার, মেডিক্যাল প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করছে। অথচ ওষুধের গুণগত মান ও কার্যকারিতা নিয়ে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করছে না। ফলে সচেতনতার অভাবে ক্রেতারা ওষুধ সম্পর্কে অন্ধকারে থাকছেন। ওষুধ কিনে ভয়ংকর প্রতারণার শিকার হলেও তাদের কোনো প্রতিকার পাওয়ার পথ নেই। ওষুধ কোম্পানি প্রভাবিত ডাক্তারদের ওপরই তাদের শতভাগ নির্ভর করতে হচ্ছে। বিভিন্ন অসুখে মানুষ পুরনো প্রেসক্রিপশন ধরে ওষুধ কিনে বিপদে পড়ছেন। অন্যদিকে ওষুধ কোম্পানিগুলো অনৈতিক মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে ডাক্তারদের ফ্রিজ, টিভি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, বিদেশ ভ্রমণ, নগদ টাকা দিয়ে পুরো ওষুধ বাজারকে প্রভাবিত করছে। এই অরাজকতা বন্ধে প্রতিটি ওষুধের গুণতম মান ও কার্যকারিতা নিয়ে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারণা প্রয়োজন, যাতে মানুষ যেন নিজের বুদ্ধি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জেনে বুঝে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন। কারণ, ওষুধ কোম্পানি প্রভাবিত ডাক্তাররা রোগীদের সচেতনতার অভাবে ইচ্ছেমাফিক অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে প্রেসক্রিপশন ভারী করছেন। এতে ওষুধ কোম্পানির অনৈতিক মুনাফা এবং ডাক্তারদের রোজগার বাড়লেও কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

দেশে ওষুধ শিল্পের বিজ্ঞাপন প্রচারে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসনের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো কোম্পানি তার নতুন ওষুধ কিংবা চিকিৎসাপণ্য সম্পর্কে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জনগণকে জানাতে পারে না। বিশ্ববাজারে প্রসিদ্ধি পাওয়া বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতায় ভূমিকা রাখার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে বিধিমালা সংশোধন করে ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ করে দিতে বলেছেন তারা।

ওষুধ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসি বাণিজ্যিক তৎপরতার কারণে দেশে মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ’ নামে লাখো মানুষের একটি পেশাজীবী শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তাদের তৎপরতায় মানহীন অপ্রয়োজনীয় ওষুধ রোগীর প্রেসক্রিপশনে ঠাঁই পেয়ে যায়। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫৮ ভাগ কর্মীই ওষুধের বাজারজাতকরণ (মার্কেটিং) ও বিতরণে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের ২৯ ভাগেরও বেশি ব্যয় হয় বিপুল সংখ্যক এ কর্মীর পেছনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানিগুলো সিনিয়র ডাক্তারদের টার্গেট করে উপহার-উপঢৌকন দেয়। তাদের অনুসরণ করে ঘুষ নেওয়া শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররাও। বিনিময়ে ডাক্তাররা রোগীর প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ওই কোম্পানির ওষুধ বেশি করে লেখেন। ডাক্তারদের মনিটরিং করে কোম্পানির লোকজন; তারা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। ওষুধ কোম্পানিগুলো সেই ঘুষের টাকা উসুল করে ওষুধের দাম বাড়িয়ে।’ সচেতনতার অভাবে ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে যা লিখে দেন সেটাই তারা অব্যর্থ ওষুধ হিসাবে কিনে সেবন করেন। ওষুধ সম্পর্কে ন্যূনতম সচেতনতা থাকলে এই বাহুল্য সহজেই এড়ানো যায়।

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) জানিয়েছে, দেশে ওষুধের বিপণন বাবদ টার্নওভারের ২৯ শতাংশের বেশি খরচ করছে কোম্পানিগুলো। দেশে ওষুধের বাজারের আকার এরই মধ্যে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সে হিসাবে শুধু বিপণন বাবদ ওষুধ কোম্পানিগুলো বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করছে। কিন্তু এই বিপণন প্রক্রিয়াটি খুবই অস্বচ্ছ। ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রধানত ডাক্তারদের উপঢৌকন হিসেবে এই ৬ হাজার কোটি টাকার বেশির ভাগ ব্যয় করে। এ জন্য গত তিন-চার দশক ধরে দেশে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ (এমআর) নামে একটি নতুন পেশাজীবী শ্রেণি গড়ে উঠেছে। হাসপাতালের গেটে, ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে এসব প্রতিনিধি নিয়মিত জড়ো হন। ডাক্তারদের প্রভাবিত করার মাধ্যমে তারা নিজেদের কোম্পানির ওষুধ লেখান রোগীর প্রেসক্রিপশনে। বিনিময়ে ডাক্তাররা ওষুধ কোম্পানি থেকে পান নানা সুবিধা। প্রকারান্তরে অনেক ডাক্তারই এখন ওষুধ কোম্পানির বিজ্ঞাপনদাতা। ফলে ওষুধের ক্রেতা জানতে পারছে না ওষুধের গুণাগুণ ও কার্যকারিতা। অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের কোম্পানির ওষুধও বিপণন কৌশলে ‘বাজার’ পেয়ে যাচ্ছে। ওষুধ শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, সংবাদ মাধ্যমে ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচারে বিধিনিষেধ থাকায় এ কৌশল অবলম্বন করছে তারা। কারণ, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া প্রচারমাধ্যমে ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচার ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবস্থায় ওষুধের বিজ্ঞাপন বাবদ বিপুল অঙ্কের এ অর্থ ব্যয় কোথায়, কীভাবে খরচ হয় সে প্রশ্ন উঠছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ডাক্তারদের তুষ্ট রাখতেই হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ওষুধ কোম্পানিগুলো। এই প্রক্রিয়াটি এখন ওপেন সিক্রেট বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত কোম্পানির নিয়োগকৃত মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভের (এমআর) মাধ্যমে ডাক্তারদের বাসায় উপহার সামগ্রীটি পৌঁছে দেয় ওষুধ কোম্পানি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ওষুধ বিপণন একটি নিয়মের মধ্যে এলেও দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশে তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। ওষুধ কোম্পানির টাকায় চিকিৎসকদের বিদেশ ভ্রমণ বা উপঢৌকন নেওয়ার মতো অনৈতিক চর্চাগুলো তদারকির মধ্যে নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। তাদের অধিকাংশই এখন দূষিত হয়ে পড়েছেন। চেম্বারে এসে এমনিতেই টাকা পেয়ে যান, কোনো পরিশ্রম নাই, ভালোই লাগে। এভাবে নিতে নিতে তাদের জায়গাটা দূষিত হয়ে গেছে। এ জন্য তাদের ইনকামের হিসাব নেওয়া উচিত। ডাক্তারদের অনৈতিক উপহারের কারণে ওষুধের দাম বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কম কার্যকর, বেশি ক্ষতিকর, বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধ রোগীর শরীরে চলে যাচ্ছে। এতে রোগীর শরীরের কোনো অংশের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। কিডনিসহ নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট হতে পারে। ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতে অনৈতিক বিপণন বন্ধের কথা বলা হলেও বন্ধ হয়নি। উপরন্তু ওষুধের মান ও কার্যকারিতা সংবাদপত্রে প্রচারের ব্যবস্থাটা বন্ধ করা হয়েছে। ফলে তথ্যের অভাবে ওষুধ সম্পর্কে কোনো কিছুই জানতে পারছে না রোগী। এদিকে ওষুধের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে বিশেষজ্ঞের অভাব জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। ঔষধ প্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই সুযোগটিই নিচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলো।

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রভাব এতটাই বেশি যে, তারা ওষুধের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অনুমোদন পেয়ে যায়। তাঁর মতে, বাংলাদেশে ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ঠিকমতো হয় না, যার ফলে বিপজ্জনক ওষুধের যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রধান লক্ষ্য মুনাফা করা, ফলে তারা জনস্বাস্থ্যের দিকটি উপেক্ষা করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মূল্যবান জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। তাদের উৎপাদিত ওষুধের গুণাগুণ ও কার্যকারিতা স্বচ্ছতার সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। মানুষ যেন নিজের বুদ্ধি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জেনে বুঝে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে পারে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com