জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত সভায় মোট এক হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে হাওর ও বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীল জীবনমান গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ (সিআরএলইপি) এই সভায় অনুমোদন পায়নি।

ঢাকা শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের এই সভায় প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টার অসুস্থতার কারণে সভা শেষে কোনো সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ, ৫০ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন এবং বাকিটা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হবে। অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে তিনটি নতুন, সাতটি সংশোধিত এবং তিনটি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তবে তাতে অতিরিক্ত ব্যয় করা হবে না।

সর্বাধিক আলোচিত প্রকল্প ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদন পায়নি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকল্পের কাঠামো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, প্রকল্পে জলবায়ু সহনশীলতার নামে প্রধানত অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেখানে টেকসই জীবিকা উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য হ্রাসের দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে। এ কারণে একনেক সিদ্ধান্ত নেয়, প্রকল্পটি হাওর অঞ্চলের প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামোর অংশ কমিয়ে পুনর্গঠন করে পুনরায় উপস্থাপন করতে হবে।

এর আগে একাধিক গণমাধ্যমে ‘জলবায়ু সহনশীলতার আড়ালে ইট-পাথরের প্রকল্প’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল প্রকল্পটি মূলত অবকাঠামো নির্মাণের ওপর জোর দিয়ে প্রকৃত জলবায়ু সহনশীলতার চাহিদা পূরণে অগ্রাধিকার দেয়নি। পরিবেশবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই হাওর এলাকায় অতিরিক্ত রাস্তা ও ভবন নির্মাণের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন, যা বন্যার সময় পানি প্রবাহ ব্যাহত করে কৃষিজমি ও মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত করে।

একনেক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প ফেরত পাঠানো হয়েছে, তবে এটি বাতিল করা হয়নি। প্রকল্পের কাঠামো পরিবর্তন করে স্থানীয় মানুষের জীবিকা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ অংশ জোরদার করার পর পুনরায় একনেকে উপস্থাপন করা হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রকৃতি বিনষ্ট নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

অন্যদিকে, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি, পল্লী অবকাঠামো, সড়ক, রেল, স্বাস্থ্য, শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন উদ্যোগ। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পসমূহ হলো—কক্সবাজারে কৃষি খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর, গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা টেকসইকরণ, খুলনা বিভাগের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়ন, উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, ক্যানবেরায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণ, কিশোরগঞ্জ থেকে পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর টোক সড়ক উন্নয়ন, বিএসটিআই’র পরীক্ষাগার সম্প্রসারণ, ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট পুনঃশক্তিকরণ, পাবনার মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইনস্টিটিউটে রূপান্তর এবং রেলওয়ের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন।

একনেকের এই অনুমোদিত প্রকল্পগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সেবার মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে নজরদারি ও মনিটরিং জোরদার করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়েছে।