নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২৬ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের তুলনায় দুই থেকে তিন মাস পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ অথবা মে মাসের শুরুতে এই পরীক্ষা শুরু হতে পারে। পরীক্ষার সময়সূচি, কেন্দ্র তালিকা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রস্তুতি এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে করে ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষা আয়োজন করা বাস্তবসম্মত হবে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছে। নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা, প্রশাসনিক ব্যস্ততা এবং ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ সময় ব্যবহৃত হওয়ায় পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ও রুটিন নির্ধারণে বোর্ডগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, আসন্ন বোর্ড সভায় পরীক্ষার সময়সূচি চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সময় নির্ধারণ করা হচ্ছে, যাতে পরীক্ষার্থীদের জন্য সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের শেষ ভাগ অথবা মে মাসের শুরু থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসএসসি পরীক্ষা দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা হওয়ায় এর সঙ্গে প্রশাসনিক, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বড় অংশ নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকে। একই সময়ে পরীক্ষা আয়োজন করলে কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, প্রশ্নপত্র পরিবহন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতসহ বিভিন্ন বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
পূর্ববর্তী বছরগুলোর অভিজ্ঞতাও এ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এসএসসি পরীক্ষা স্বাভাবিক সময়সূচি থেকে সরে গিয়ে ১৪ নভেম্বর শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও প্রস্তুতিগত কারণে পরীক্ষা শুরু হয় ১৫ সেপ্টেম্বর। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ৩০ এপ্রিল থেকে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে আয়োজন করা সম্ভব হয়। এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষ এবার আগেভাগেই সময়সূচি পুনর্নির্ধারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পরীক্ষা পেছানো হলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও প্রস্তুতির ওপর এর প্রভাব নির্ভর করবে সময়মতো সিদ্ধান্ত ঘোষণা এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার ওপর। নির্ধারিত সময়ের আগেই রুটিন প্রকাশ করা হলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে। একই সঙ্গে পাঠ্যসূচি সম্পন্ন, ব্যবহারিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সহজ হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলে পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচি, ফরম পূরণ, কেন্দ্র নির্ধারণ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। বোর্ড সূত্র জানায়, পরীক্ষার্থীদের স্বার্থ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার কথা বিবেচনায় রেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানোই বর্তমান লক্ষ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোর সমন্বয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।