প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনে প্রয়োজনীয় রদবদল তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, “ভোটে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে, এমন যোদ্ধাদেরই বেছে নেওয়া হবে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা জানান। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ড. ইউনূস, যিনি বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও রয়েছেন, বলেন যে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে তার দেখভালের আওতায় আসবে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত করা একাধিক ‘ফিট লিস্ট’ পর্যালোচনা করে যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে দায়িত্ব প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, “যেসব কর্মকর্তা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সক্ষম এবং আইন ও নীতিমালার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, তাদেরকেই নির্বাচনী দায়িত্বে নিযুক্ত করা হবে।”
বৈঠকে বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে পড়েছেন, তাদেরকে এই নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হোক।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা চাই, প্রশাসনে এমন রদবদল হোক, যা জনগণের আস্থা ফেরাতে পারে। দলীয় প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ ও পেশাদার প্রশাসন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটাই জনগণের প্রত্যাশা যে, প্রশাসনিক কাঠামোতে এমন পরিবর্তন হবে যা কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষা না করে কেবল জনগণের এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে।”
বিএনপির পক্ষে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বৈঠকে নির্বাচনী সময়ের প্রশাসনিক নীতিমালা, মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা এবং সম্ভাব্য সহিংসতা রোধে করণীয় বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। সূত্রমতে, বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু নির্দিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নামও উত্থাপন করা হয়েছে, যাদের পূর্ব আচরণ দলটির দৃষ্টিতে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করাকে কেন্দ্র করে নানা মহলে আলোচনা চলছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে বিরোধী দলগুলো বারবার অভিযোগ করেছে যে, নির্বাচনকালীন প্রশাসন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকে কাজ করেছে, যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশাসনিক কাঠামোতে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছেন।
ড. ইউনূস আশ্বস্ত করেছেন যে, আগামী দিনের মধ্যে প্রশাসনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও নিয়োগ সম্পন্ন হবে এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা একান্ত অপরিহার্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের রদবদল কতটা নিরপেক্ষ ও কার্যকর হয়, সেটিই নির্ধারণ করবে নির্বাচন নিয়ে জনগণের আস্থা কতটা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।