নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি ওই দিন সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পর তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলীয়ভাবে অভ্যর্থনা ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে বিএনপি একটি অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তার নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল আজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনকালে প্রতিনিধিদলটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বিমানবন্দরের অবতরণ এলাকা, যাত্রী গ্রহণের স্থান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সম্ভাব্য রুটসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর পাভেল এবং তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামছুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে যাত্রী ও বিমানবন্দর পরিচালনা ব্যবস্থায় যাতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সে বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিমানবন্দর পরিদর্শন শেষে বিকেল ৪টার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, তারেক রহমানের অবতরণের স্থান, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া এবং সেখান থেকে যাত্রাপথ পর্যালোচনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমানবন্দর থেকে তিনি গাড়িযোগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে যাবেন এবং পরে নিজ বাসভবনে পৌঁছাবেন। এসব গন্তব্য ও রুট নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, যান চলাচল এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, তারেক রহমানের আগমন ঘিরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আগমন ও পরবর্তী যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন রাখার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, দলের নিজস্ব নিরাপত্তা টিম সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা করেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ সময় প্রবাসে অবস্থানের পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে দলটি মনে করছে। তবে দলীয় নেতারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা সমাবেশের বিস্তারিত ঘোষণা দেননি। তারা জানিয়েছেন, আগমন উপলক্ষে শৃঙ্খলা ও আইনগত কাঠামোর মধ্যে থেকেই সব আয়োজন সম্পন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, তারেক রহমান দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতে বিএনপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার দেশে ফেরার খবরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হলেও, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নাগরিক ভোগান্তি এড়াতে কেন্দ্রীয়ভাবে সংযত আচরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিতে পারে এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে দলটি আগমন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রস্তুতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ২৫ ডিসেম্বর সকালেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।