জাতীয় ডেস্ক
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির প্রথম জানাজা সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সিঙ্গাপুরের আঙ্গুলিয়া মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরে তার মরদেহ বাংলাদেশে আনা হবে এবং ঢাকায় দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সংগঠনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শহীদ হাদির মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট সিঙ্গাপুর থেকে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ০৫ মিনিটের দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র ধারণা করছে। দেশে পৌঁছানোর পর মরদেহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে প্রথম জানাজার পর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে এনে শনিবার বাদ জোহর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দ্বিতীয় জানাজা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সহযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। জানাজা ও দাফনের বিস্তারিত সময়সূচি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।
শরিফ ওসমান হাদি গত সাত দিন ধরে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে দেশে-বিদেশে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ, চেতনা লালন এবং সংগঠিত আন্দোলনের কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে শরিফ ওসমান হাদি ইনকিলাব মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন। গণঅভ্যুত্থানের সময় ও পরবর্তী পর্যায়ে তিনি সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও অবস্থান তুলে ধরেন। তার ভূমিকা আন্দোলনের সংগঠিত রূপ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়ে আসছিল।
শহীদ হাদির মৃত্যুর বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নিশ্চিত করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির এক সাহসী যোদ্ধার মৃত্যু জাতির জন্য গভীর বেদনার সংবাদ। তিনি নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
হাদির ইন্তেকালের খবরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথকভাবে শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোক ও সমবেদনা জানায়। অনেক সংগঠন তার অবদান স্মরণ করে বিবৃতি দিয়েছে এবং কর্মসূচি স্থগিত করেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শহীদ হাদির স্মরণে আজ দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হবে এবং আগামীকাল রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে। এ উপলক্ষে সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। একই সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় নতুন করে নিরাপত্তা ও সহিংসতা রোধের প্রশ্ন সামনে এনেছে। তার জানাজা ও রাষ্ট্রীয় শোক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জনসমাগম হতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।