আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ার নবনির্মিত হাইপারসনিক ও পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’ বেলারুশে মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গতকাল থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশে স্থাপন করা হয়েছে এবং তা সম্পূর্ণ যুদ্ধের প্রস্তুত অবস্থায় রাখা হয়েছে।
‘ওরেশনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত বছর প্রথমবার ইউক্রেনের দনিপ্রো শহরে হামলায় ব্যবহারের পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা এটিকে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের উত্তেজনা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমানে চতুর্থ বছরে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
বেলারুশ, যেটি রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সময় ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছিল। এ অবস্থান বেলারুশকে পশ্চিমা দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। রাশিয়ার এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ফলে পূর্ব ইউরোপে সামরিক ভারসাম্যের ওপর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত আগস্টে বেলারুশ জানিয়েছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের কাছে অনুষ্ঠিতব্য যৌথ সামরিক মহড়া জাপাদ-২০২৫ (ওয়েস্ট-২০২৫)-এর সময় ‘ওরেশনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের অনুশীলন করা হবে। ওই মহড়া পূর্ব ইউরোপে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়।
‘ওরেশনিক’ হলো হাইপারসনিক ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র, যা প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় দ্রুতগতিতে লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগোয় এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এর পারমাণবিক সক্ষমতা এটি যেকোনো সামরিক সংঘাতে বিশেষত উচ্চতর বিধ্বংসী ক্ষমতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি করে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পূর্ব ইউরোপে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।
বেলারুশে এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ফলে পশ্চিমা দেশগুলো এবং ন্যাটো মিত্র দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তা নীতি পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এর পাশাপাশি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চলমান পরিস্থিতিতে নতুন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার কৌশলগত এবং রাজনৈতিক ফলাফল নিয়ে আসতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বেলারুশের ভূখণ্ডে এই অস্ত্র মোতায়েন করা রাশিয়ার জন্য কৌশলগত সুবিধা প্রদান করবে। এটি ইউক্রেনের সীমান্তসহ পূর্ব ইউরোপে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। বেলারুশ-রাশিয়ার সামরিক সমন্বয় এবং অস্ত্রব্যবস্থার উন্নয়ন আগামী বছরের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রভাব ফেলবে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বেলারুশে হাইপারসনিক ও পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের বিষয়টি নিয়মিতভাবে নজর রাখছেন। এটি পূর্ব ইউরোপে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।