রাজনীতি ডেস্ক
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারাল। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।”
শোকবার্তায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক সাফল্যের কারণে বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হওয়া এবং দীর্ঘদিন কারাবাসে থাকার পরেও তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না; তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।” এই অবদান এবং দীর্ঘ সংগ্রামকে সম্মান জানিয়ে সরকার চলতি মাসে তাঁকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
প্রফেসর ইউনূস বেগম খালেদা জিয়ার গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তাঁর আপোষহীন নেতৃত্বে দেশ বারবার গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও জাতির কল্যাণে বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল সব সময় পথ দেখিয়েছে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের প্রথম নারী নেতৃত্বের উদাহরণ স্থাপন করেছেন এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করা খালেদা জিয়া তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের শাসন পতনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বেগম খালেদা জিয়ার শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদানকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করে তিনি নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সাফল্য প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি জয়লাভ করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক হিসেবে দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বেগম খালেদা জিয়ার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং দেশের মানুষকে শান্ত ও ধৈর্যশীল থাকার আহ্বান জানান। তিনি সকলকে যথাসম্ভব দোয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অনুরোধ করেন।