নিজস্ব প্রতিবেদক রাজধানীসহ সারা দেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন—মার্কেট, গণপরিবহন, রেস্তোরাঁ খোলা, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন? শিক্ষার্থীরা তো নিয়মিতই ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। আর গণপরিবহন যদি এক সিট ফাঁকা রেখে চালানো যায়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক সিট ফাঁকা রেখে ক্লাস কেন করানো যাবে না?
গতকাল সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং জেলা সদরগুলোতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রাজধানীর মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টসহ সব প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা অযৌক্তিক। তাই আমরা অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবি জানাচ্ছি।’ মো. আশরাফুল নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সব কিছু খোলা রেখে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো মানেই হয় না, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা অতি দ্রুত আমাদের ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ, সেশনজট না বাড়িয়ে অবিলম্বে ক্লাসে ফেরার ব্যবস্থা করুন।’
শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আমলাদের সঙ্গে নয়, আমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলুন। তাঁরা অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ দেবেন। বাড়িতে থেকে থেকে অনেকেই বিপথে চলে যাচ্ছে। বিপথে যাওয়ার আগেই তাদের ক্লাসে ফেরার ব্যবস্থা করার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আজ-কাল না করে অতিদ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন, তা না হলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।’ আরেক শিক্ষার্থী জানান, করোনার এই দীর্ঘ সময়ে কতজন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে আর কতজন মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে যাচাই করে দেখুন। শিক্ষার্থীদের মেন্টাল প্রেসার থেকে মুক্তি দিতে আশা করছি সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল ও ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন তাঁরা। মানববন্ধনে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁদের বর্তমান অবস্থার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে সব কিছুই যদি স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক খোলা হয়ে থাকে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন খোলা হবে না? সেশনজট, লকডাউন মিলিয়ে এক বর্ষেই তিন বছর পার করে ফেলেছি, এখন শুধুই হতাশা বাড়ছে, আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছি না।’
অপর এক শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে আজ অবধি তৃতীয় বর্ষেই আছি। শপিং মল থেকে শুরু করে সব কিছুই খোলা রয়েছে, বন্ধ রয়েছে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।’
আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, গতকাল টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেশে সব কিছু চালু হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না। এভাবে আর কত দিন আমরা বসে থাকব? স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি।’
এ ছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলা-উপজেলা শহরে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।