নিজস্ব প্রতিবেদককরোনা মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার চলছে। গত এক বছরে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুইস ব্যাংকে জমা হওয়া টাকার পরিমাণ ৫ হাজার ২০১ কোটি। ধারণা করা হচ্ছে এর বেশিরভাগই দেশ থেকে পাচার করা। আগের বছরের তুলনায় শতাংশ হিসেবে এই টাকা ৭ শতাংশ কম। গত বছর সুইস ব্যাংকে জমানো টাকার পরিমাণ ছিল সাড়ে ৫ হাজার কোটিরও বেশি। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটি সারা পৃথিবীর নাগরিকদের জমাকৃত অর্থের দেশভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করে থাকে। ব্যক্তিগত কারও তথ্য প্রকাশ করে না। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সাল শেষে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ হাজার ২০১ কোটি টাকা। বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা এখন জমা আছে, তা দেশের ১০টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে বেশি। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ২০১৮ সালে যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি ফ্রাঁ। ২০১৭ সালে ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি ফ্রাঁ। ২০১৬ সালে ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকে বিদেশিদের মোট আমানত ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি ফ্রাঁ। ২০১৪ সালে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ফ্রাঁ। ২০১৩ সালে ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি, ২০১২ সালে ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি ফ্রাঁ। ২০১১ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি, ২০১০ সালে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি এবং ২০০৯ সালে ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি ফ্রাঁ। প্রতিবেশী ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে জমানো অর্থের পরিমাণে এবার বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। ৮৯ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ২.৫৫ বিলিয়ন হয়েছে। পাকিস্তানিদের জমা অর্থের পরিমাণ ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬৪ কোটি ২২ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের ২৪৩টি ব্যাংকের হিসাব প্রকাশ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেদনে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৩৭৭ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। যাদের জমার পরিমাণ ১৫২ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। তালিকায় এর পরে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফ্রান্স, হংকং, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও লুক্সেমবার্গ। সারা পৃথিবীতে ধনী ব্যক্তিরা সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। দেশটির গোপনীয়তার নীতির কারণে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের আগ্রহের জায়গা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎস সুইস কর্তৃপক্ষ জানতে চায় না। কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি হিসাব প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে কোনো গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করা হয় না। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমানো অর্থ সব পাচারের ঘটনা নয়। যারা সুইজারল্যান্ড থাকেন বা বিভিন্ন ব্যবসায়িক লেনদেনে জড়িত তাদের জমানো অর্থ। তা পুরোপুরি বৈধ। এখানে কোনো পাচারের বিষয় নেই।