1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

বঙ্গবন্ধুর আদর্শই আমাদের প্রেরণা

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১
  • ১৭৭ বার দেখা হয়েছে

আসাদুজ্জামান খান ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক’। বিশ্বকবির এই ঐকান্তিক ইচ্ছার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে পাই একটি জীবনে। যার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি বাঙালির জাতির পিতা; আমাদের মুক্তির মহানায়ক। বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার অতি আপনজন মুজিব ভাই।

তিনি হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে নক্ষত্রের অক্ষরে রচিত একটি নাম, যা আপন আলোতেই ভাস্বর হয়ে থাকবে। তাই তো স্বাধীনতার অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। মিছিলের স্লোগানের মতোই ধ্বনিত হয়-‘মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস’।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে এসেছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট। স্বাধীন দেশের যুদ্ধজয়ী বীর শেখ মুজিবের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ফ্রস্ট। মুজিব তখন বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মানুষের নেতা; একটি ব্র্যান্ড। বিশ্বনেতা মুজিবের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ফ্রস্টের প্রথম প্রশ্নই ছিল, ২৫ মার্চ আপনি কেন গ্রেফতার হলেন?

উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মরি, তবু আমার দেশবাসী রক্ষা পাবে। আমি নেতা, প্রয়োজনে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব, কিন্তু পালিয়ে যাব কেন?’ ডেভিড ফ্রস্টের অনেক প্রশ্নের উত্তরে ঘুরেফিরেই ছিল বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর মমত্ববোধের কথা। ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালিকে ভালোবাসি’। বড় অযোগ্যতা কোনটা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালিকে বেশি ভালোবাসি। জনতার প্রতিই আমার প্রথম ভালোবাসা। আমি তো জানি, আমি অমর নই।’

বঙ্গবন্ধুর মতো বাঙালিকে এতটা ভালোবাসতে পেরেছে কে? এ ভালোবাসার জন্য তিনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে জেল খেটেছেন। হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে যেতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতার প্রশ্নে কখনোই আপস করেননি। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির অপর নাম জনগণকে ভালোবাসা। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অমৃতধারায় সঞ্জীবিত এক প্রাণশক্তি।

হঠাৎ ক্ষমতার পালাবদলে বাঙালির নেতা হননি শেখ মুজিব। শোষিত বাঙালির মুক্তির ভরসাস্থল হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতার প্রতিটি সোপানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আত্মত্যাগ এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। এ কারণে তিনি ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বলতে পেরেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি এ দেশের মানুষের অধিকার চাই’।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ নামের গণমানুষের দলের নেতা হয়েছিলেন। বাঙালির একক নেতা হিসাবে আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর আস্থা ছিল বলেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পেরেছিলেন। আমরা মুক্তিকামী বাঙালি নেতা শেখ মুজিবকে বিশ্বাস করতাম।

রেসকোর্সের ময়দানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। এ কারণে প্রিয়নেতা শেখ মুজিবের নির্দেশ মেনে ফার্মগেট এলাকায় আমরা প্রতিরোধের ব্যারিকেড তৈরি করেছিলাম। ২৫ মার্চ আমরা স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের নির্দেশে ফার্মগেটে কড়ইগাছ কেটে, পুরোনো ভাঙা গাড়ি, ইট-সুরকি দিয়ে বড় ব্যারিকেড তৈরি করেছিলাম।

ভয়াল সেই কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতেই অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা চূড়ান্ত হয়। এ অপারেশনের প্রধান টার্গেট ছিল আন্দোলনরত আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে বলপ্রয়োগ করা। অস্ত্রের ভাষায় পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েছিল। যে কারণে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হওয়া অসংখ্য সাঁজোয়া যানের গন্তব্য ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পিলখানার ইপিআর সদর দপ্তর। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফার্মগেটের সামনে এসে বাঙালির ব্যারিকেডের মুখে পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধের প্রথম ব্যারিকেড গুঁড়িয়ে দিয়ে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাতকরা সামনের দিকে চলে যায়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনেই আমরা ফার্মগেটে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ তৈরি করতে পেরেছিলাম। সে রাতে রচিত হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রেরণার শক্তির উৎস ছিলেন আমাদের নেতা শেখ মুজিব। তার নেতৃত্বেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। শেখ মুজিবের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়েছে বঞ্চিত বাংলার সুদূর গ্রামাঞ্চলে, নীরব-নিভৃত পল্লীতে। যে ক্ষমতার উৎস জনগণের সমবেত ইচ্ছায়, সহযোগিতায় ও সমর্থনে নিহিত, সে সুপ্ত ক্ষমতার পুনর্জাগরণই মুজিব রাজনীতির মূলমন্ত্র। আবেদন-নিবেদনে অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার অবসান কখনো হয় না। সেজন্য প্রয়োজন জনশক্তির। অকৃত্রিম ভালোবাসার জাগরণী মন্ত্রে এ জনশক্তিকে জাগিয়ে তোলাই ছিল মুজিব রাজনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য। জনতার শক্তিকে বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন। সেই শক্তিকে বিশ্বাস করেই বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করছেন। গ্রাম কিংবা শহরের প্রত্যেক মানুষের মনের কথা বুঝে পথচলার শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন করছেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন, বাঙালি জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। তাই সংকল্প করলেন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। প্রথম প্রতিবাদ করেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রশ্নে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র ধর্মঘট করতে গিয়ে গ্রেফতার হলেন। কিন্তু কয়েকদিন পর পাকিস্তান সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব হারান। তাকে আবারও জেলে নেওয়া হয়। কিন্তু তিনি অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি।

জেলে থাকতেই বাঙালির অধিকার আদায়ে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। জেল থেকে বের হয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে গোটা পূর্ব পাকিস্তান চষে বেড়িয়েছেন, মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। বাঙালির মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। নেতাকর্মীদের খোঁজ রাখা, কর্মী সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী সংগঠন আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠিত করেছেন। প্রচণ্ড ধীশক্তির অধিকারী নেতা শেখ মুজিব কর্মীদের নাম মনে রাখতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন।

তরুণ রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবকে সব সময় গোয়েন্দারা নজরদারির মধ্যে রাখত। কারণ, তার মধ্যে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ করার নেতৃত্বগুণ ছিল। মানুষ তার কথা বিশ্বাস করত এবং তিনি ছিলেন আপসহীন। এ কারণে ১৯৫০ সালের শুরুতে আবার গ্রেফতার হলেন মুজিব। টানা আড়াই বছর বন্দি করে রাখা হলো তাকে। ছোট্ট হাসিনা মায়ের সঙ্গে জেলগেটে বাবাকে দেখতে যেত। বাবাকে রেখে শেখ হাসিনা আসতেই চাইত না। দীর্ঘ ২৭ মাস পর জেলখানা থেকে মুক্তির পর বাড়িতে যান শেখ মুজিব। অনেকদিন পর বাবাকে পেয়ে শেখ হাসিনা খুবই আনন্দিত হয়। কিন্তু ছোট্ট শেখ কামাল বাবাকে চিনতে পারে না। কারণ, কামালের জন্মের পর থেকেই বাবা শেখ মুজিব জেলখানায়। তাই ছোট্ট কামাল তার বোন শেখ হাসিনাকে গিয়ে বলে, ‘এই হাচু, এই হাচু, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?’ দীর্ঘদিন জেলে থাকলে নিজের সন্তানও বাবাকে চিনতে পারে না। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে ৩০৫৩ দিন জেল খেটেছেন। জনগণের কাছে বন্ধু, জাতির কাছে পিতা। আর পরিবারের কাছে? ঘরের থেকে যিনি বেশি থাকেন জেলখানায়, পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার তার সুযোগ মিলেছে কম। এমনকি বড় মেয়ের বিয়েটাও নিজে উপস্থিত থেকে দিতে পারেননি বাবা হয়ে। যদিও তার হয়ে নীরবে কিন্তু শক্ত হাতে সংসার সামলেছেন যোগ্য সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব। যার ওপর ন্যস্ত ছিল পরিবারের সবাইকে দেখে রাখার দায়িত্ব। এমনকি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে বিপদের আশ্রয়স্থল ছিলেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব। তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি কারাবন্দি স্বামীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গোপনে নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। সংসারের খরচের টাকা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হাতে দিতে অভ্যস্ত ছিলেন বেগম মুজিব। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নানাভাবে আওয়ামী লীগ পরিচালনায় অবদান রাখতেন বঙ্গমাতা।

রেণু থেকে বঙ্গমাতা হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সাহস জোগাতে বারবার ছুটে যেতেন জেলখানায়, আবার তাকে লেখা লম্বা চিঠিতে লুকাতেন এক হাতে সংসার সামলানোর যাতনা। এ বঙ্গমাতাকে পাশে পেয়েছিলেন বলেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হতে পেরেছেন বাংলার অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ পুরুষ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুকে দলীয় নেতারা অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু ব্যতিক্রম ছিলেন বেগম মুজিব। তিনি বঙ্গবন্ধুকে কারও পরামর্শ না শুনে নিজের মনের কথাই ভাষণে বলার অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু এতদিন যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেই হৃদয়ের কথাগুলো শুনতে বাঙালি ব্যাকুল হয়ে আছে-বঙ্গমাতার কয়েকটি সহজ কথা মেনেই বঙ্গবন্ধু দিতে পেরেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা। রচিত হয়েছিল ইতিহাস।

একজন বড় মাপের মানবতাবাদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক। একটি অসহযোগ আন্দোলন তিনি পরিচালনা করেছেন। সামরিক জান্তার উসকানি, হত্যা, রক্তপাত এবং অবাঙালিদের দিয়ে বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি সত্ত্বেও তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে সরে আসেননি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র অবস্থানের মধ্যে বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুরই দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের কল্যাণে। স্মরণীয় যে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৫০ বছর পরও জার্মানির মাটিতে মার্কিন, সোভিয়েত, ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনাবাহিনীর অবস্থান ছিল। কোরিয়া যুদ্ধের ৫০ বছর পরও দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সৈন্য আর জাপানে অদ্যাবধি মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে।

পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টে যখন ভোর হচ্ছিল, বাঙালি তখনো বোঝেনি কী ভয়ংকর অমানিশায় নিপতিত হচ্ছে গোটা জাতি। নিজ বাসভবনে সেনাবাহিনীর একদল পথভ্রষ্ট উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে নিহত হয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার বিদায়ে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। নিজের রক্তে, স্বজন-বান্ধবের রক্তে রাঙা যে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু পরের প্রজন্মের জন্য গড়ছিলেন, তা কলুষিত হলো ষড়যন্ত্র, ক্যু আর বিভ্রান্ত রাজনীতিতে। যারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সৈনিক, যারা বিশ্বাস করতেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে, তাদের জন্যও শুরু হয় অন্ধকার সময়। আর সদম্ভে ঘুরতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অপশক্তিরা।

তবে আদর্শ কখনো মরে না। শোকাতুর বাঙালির হৃদয়ে অনেক রক্তক্ষরণের পর জাতির পিতার আদর্শের প্রাচুর্যেই আবারও জেগে ওঠে বাংলাদেশ। পিতার দেখানো পথে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর পিতার মতোই গ্রাম-গঞ্জ-শহর এবং পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। মানুষের কষ্ট-দুঃখের কথা শুনেছেন। বাংলার মানুষ তখন মুজিবকন্যাকে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী ভঙ্গুর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সুসংগঠিত করেছেন। পিতা মুজিবের মতোই কন্যা হাসিনা বাঙালিকে বোঝার চেষ্টা করেছেন। তাই এ দেশের মানুষ দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এরপর আবার শুরু হয় ষড়যন্ত্র। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের পর ওয়ান-ইলেভেনের সামরিক শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে যোগ্য সাহচর্য দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধু একটি জাতির রূপকার। স্বাধীন বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু-এই দুটি নাম তাই অভিন্ন। আমরা সৌভাগ্যবান এ কারণে যে, শেখ মুজিবের কর্মী ছিলাম। আরও সৌভাগ্যবান; কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কর্মী হিসাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে মানুষের সমস্যা উপলব্ধি করার এবং খোঁজখবর নেওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছিলেন। আমি সেই উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

বাঙালি জাতি এখনো বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধু অমর। কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’। আমরা বঙ্গবন্ধুকে বেশিদিন দেশ শাসনের সুযোগ দিইনি। এ কারণে দীর্ঘ সময় পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সাড়ে ৩ বছরের রাষ্ট্রক্ষমতায় তিনি আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে তার পরিকল্পনা করেছিলেন। যার সফল বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তারই যোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত এক যুগে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের সব সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা করোনাভাইরাসের মহামারির সময় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। মাথাপিছু আয় এবং জিডিপিতে আমরা ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছি। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন হবেই ইনশাআল্লাহ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

আসাদুজ্জামান খান, এমপি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী; সিনিয়র সহসভাপতি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com