সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে আইন প্রণয়নের দিকে এগোচ্ছে সরকার। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) সংশ্লিষ্টরা সরকারের এমন উদ্যোগকে বলছেন সময়োপযোগী। বিশ্বের অনেক দেশের মতোই রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য এমন আইন জরুরি বলেও মনে করছেন অনেকে।
আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে। রাষ্ট্র ও সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি বিশেষ ও প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে ছড়ানো হচ্ছে অপপ্রচার, গুজব ও মিথ্যা তথ্য। এমনকি এসব মাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে সংঘবদ্ধ অপরাধের যোগাযোগমাধ্যম হিসেবেও।
আর এ ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় এবং দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর জোরালো সহায়তা পাচ্ছে না সরকার। অপরাধীদের শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ‘দয়ার’ ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে অনেকটাই। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এ বিষয়ে শক্তিশালী আইন না থাকা। ২০২০ সালের মে মাসে ফেসবুক নিজেই তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে পাঠানো আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে মাত্র প্রায় ৪৫ শতাংশ আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফেসবুক এখন যে সহযোগিতা করে সেটি আগেও করত না। প্রকৃত অর্থে, তারা হয়তো আমাদের ২৫ শতাংশের মতো তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। তারা আমাদেরকে তথ্য দেবে, তবে এ জন্য আমাদের আইন থাকতে হবে। ২০১৫ সালের দিকে যখন সাইবার আইন করা হয় তখন সেগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। সে সময় আমাদের চিন্তাতেও আসেনি যে এখনকার সময়ে এসে, তাদের নিয়ে আলাদা আইন করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করা সময়োপযোগী হওয়ার পাশাপাশি আরো আগেই এমন আইন করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, এই আইন সময়োপযোগী, তবে অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে আরও আগেই করা উচিত ছিল। অস্ট্রেলিয়াতে এমন আইন আছে, সেখানে জনসংখ্যা মাত্র ৩ কোটির মতো। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই আছেন প্রায় ১০ কোটি। তবুও এখন যেটা হচ্ছে সেটা ভালো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে এই দেশে অফিস খুলতে হবে, দেশের ভেতরেই নিজস্ব সার্ভারে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমনটা আছে, তবে দুর্ভাগ্যবশত আমরা এখনো করতে পারিনি।
অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শুধুই কোনো প্রযুক্তিগত ‘টুলস’ না বরং তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে পারে। এই দেশ থেকে তারা মুনাফা অর্জন করে, অর্থ উপার্জন করে। তাহলে তাদের প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে যদি কোনো অপরাধ সংঘটিত হয় তার জন্য তারা কোনো দায়িত্ব নেবে না; সেটা তো হয় না। তারা যদি অর্থ আয় না করত তাহলেও কিছুটা মানা যেত। আইন করে যদি এখানে তাদের অফিস-সার্ভার স্থাপন করা যায় তাহলে তাদের অনেকখানিই নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করা যাবে।
আসন্ন আইনকে সাধুবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে এর আওতায় আনতে সরকারের কাছ থেকে কঠোরতা ও কৌশলের মিশেল আশা করে আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন।