নিজস্ব প্রতিবেদকবিভিন্ন প্রলোভনের সঙ্গে রোগী ভাগিয়ে আনতে এবার দেওয়া হচ্ছে কোরবানির গরুর অফার। নিম্নমানের ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানের হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে দিচ্ছেন এমন প্রলোভন। অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং হাসপাতালের দালালরা উন্নত চিকিৎসার নামে প্রলোভন দেখিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ।
শুধু তাই নয়, রোগী ভর্তির পরও রোগীদের কাছ থেকে অযথা বিভিন্ন টেস্ট ও পরীক্ষার কথা বলে আদায় করা হতো অতিরিক্ত বিল। এমন অভিযোগের ভিত্তিকে শ্যামলীর ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালের সাথে জড়িত ও চক্রের মূলহোতা সাহাদাত হোসেন মামুনসহ চার সদস্যকে আটকের পর এমন তথ্য জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল থেকে চারজনকে আটক করে র্যাব-২ এর একটি দল। আটক অন্যরা হলেন, শ্যামলীর ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালের স্টাফ মহিন উদ্দিন মামুন (৩৬), রহমত উল্লাহ্ (৩২), আকরাম হোসেন (৫২)। মূলহোতা সাহাদতের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার জাল টাকা ও ৫৫০ পিস ইয়াবাও জব্দ করা হয়।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র্যাব-২ এর অধিনায়ক(সিও) লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম। তিনি বলেন, সম্প্রতি করোনা মহামারীর সুযোগে এক শ্রেণির দালাল চক্র রাজধানীর কিছু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী বিভিন্ন পর্যায় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করে মোটা অংকের কমিশনের মাধ্যমে রোগীদের হেনস্থা করছে। অনেকক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আবার উচ্চ ভাড়ায় ঢাকার বাইরের রোগীদের নির্ধারিত হাসপাতালে ভর্তি করার মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কমিশন পাচ্ছে।
র্যাব-২ এর ছায়া তদন্তে উঠে আসে দালাল চক্রের হোতা সাহাদৎ হোসেন ওরফে মামুনের নাম। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে জানা যায়, উন্নত চিকিৎসার নাম করে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী নিয়ে আসে এবং রোগী নিয়ে এসে আইসিইউ’তে ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন চেকআপের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো।
চক্রটির কৌশল সম্পর্কে র্যাব-২ সিও বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে তারা রোগী নিয়ে আসতো। এ ক্ষেত্রে জেলা শহরের অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং হাসপাতালের দালাল রোগীদের উন্নত চিকিৎসার কথা বলে প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত।
শ্যামলীর এই হাসপাতালে ভর্তির পর রোগীদের কাছ থেকে অযথা বিভিন্ন টেস্ট ও পরীক্ষার কথা বলে অতিরিক্ত বিল করত। জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা এসব তথ্য স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সাহাদৎ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী ভাগিয়ে আনার জন্য কমিশন দিতো দালাল ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের। সম্প্রতি কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ্য করে কোনো কোনো দালাল ও অ্যাম্বুলেন্স চালককে কোরবানির গরুও উপহার দেয়ার প্রলোভনের তথ্য পেয়েছে র্যাব।
সাহাদতের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, সাহাদৎ হোসেন মামুন প্রতারণার উদ্দেশ্যে এ পর্যন্ত ২৭টি বিয়ে করেছে। বিয়ের পর মূলত যৌতুক ও টাকা আদায় করে তাদের জিম্মি করা হতো। তাদের দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করাতো। তার প্রতারণার শিকার বিভিন্ন হাসপাতালের নার্সিং পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট নারী ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা সাধারণ রোগী বা রোগীর আত্মীয় রয়েছে বলে জানা যায়।
প্রতারক মামুন খুলনা অঞ্চলের বহুল আলোচিত ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি এরশাদ সিকদারের সহযোগী। এরশাদ সিকদারের ফাঁসির পর সে পেশা বদলে ঢাকায় এসে হাসপাতাল চক্রের দালালি, মাদক ব্যবসা ও জাল টাকার ব্যবসা করছিল। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি মামলা রয়েছে।