নিজস্ব প্রতিবেদককরোনাভাইরাসের সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে আরও ২৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ২৭১ জন।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আগের দিনের তুলনায় আজ করোনায় মৃত্যু বেড়েছে। তবে নতুন রোগী ও পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার সামান্য কমেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৫২ হাজার ২৮২জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ২৩৭ জনের। ওই সময় রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৬ হাজার ২৩০ জন। রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ১২শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৬ হাজার ২৫৩। মোট মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ২৫৫ জনের। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৫০ হাজার ২২০ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৩৩৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৫৭ জন, খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও প্রায় দুই মাস ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল থাকার পর গত শুক্রবার থেকে আবার দুই সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া এবং তাদের ফিরে আসায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ঈদ ঘিরে বিধিনিষেধ শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিল।
এদিকে ইউএন নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ (গতকাল বুধবার পর্যন্ত) তথ্যানুসারে, ডেলটা ধরনের কারণে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও ব্যাপক বেড়েছে। বিশ্বে গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ২১ শতাংশ। এই সপ্তাহে মারা গেছেন ৬৯ হাজারের বেশি। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
আঞ্চলিকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। যদিও আগের সাত দিনের চেয়ে এ সপ্তাহে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের মতো কম ছিল। তবে শঙ্কার কথা হচ্ছে, ইউরোপ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে নতুন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
ডব্লিউএইচও বলেছে, সাত দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চসংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এই সময়ে শনাক্ত হওয়া নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৩১ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের পর নতুন রোগী বেড়েছে ব্রাজিলে, ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৪ জন। এই এক সপ্তাহে এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৯, ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে ২ লাখ ৮২ হাজার ৯২০ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বিশ্বে সংক্রমণ সাড়ে ১৯ কোটির মতো। মৃত্যু ৪২ লাখের কাছাকাছি। গত সোমবার পর্যন্ত বিশ্বে ৩৭০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের চারটি মিউটেশন (রূপান্তর) বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ধরনগুলো ‘ব্যাপক উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘের এই সংস্থা। তারা বলেছে, এ পর্যন্ত আলফা ধরন ১৮২টি দেশে, বেটা ১৩১টি দেশে, গামা ৮১টি দেশে এবং ১৩২টি দেশে ডেলটা ধরন শনাক্ত হয়েছে। গত সপ্তাহে আরও আটটি নতুন দেশে ডেলটা সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
বিজ্ঞাপন